চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাবার লাশ আটকে রেখে সন্তানদের পেনশনের টাকা বন্টন নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনা গণমাধ্যমে আলোচিত হতে থাকে। গতকাল রবিবার(২৬ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় সেই বাড়িতে দেখা যায় অবসরের টাকা বন্টন নিয়ে ভাই-বোনদের দ্বন্দ্বে বাড়ির উঠানে অ্যাম্বুলেন্সেই পড়ে ছিল বাবার লাশ।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলমের হস্তক্ষেপে লাশটি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মারা যান।
ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এমন ঘটনা শুনতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইউপি সদস্যকে পাঠাই। দুই মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের জমা টাকা পরে সুষ্ঠু বণ্টনের আশ্বাস দিয়ে লাশ দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার সাড়ে ১৭ হাজার টাকাও আমি পরিশোধ করেছি।
আলোচিত এ ঘটনাটি ঘটে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে। মারা যাওয়া মনির আহমেদ পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি গত বছর অবসরে যান। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে আছে। ছোট ছেলে বিদেশে থাকেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,শনিবার বিকেল মনির আহমেদ মারা গেলে রাতে লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর মনির আহমেদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা ব্যাংকের টাকা উত্তোলন বাকবিতণ্ডা ও পরে দ্বন্দ্বে জড়ান। ফলে আটকে থাকে জানাজা ও দাফনের কাজ।
গণমাধ্যমে দ্বন্দ্বের কারণে লাশ আটকে থাকার সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে রবিবার রাতেই লাশ রেখে চলে যান মনির আহমেদের তিন মেয়ে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে মনির আহমেদের স্ত্রী দিলুয়ারা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, চাকরি থেকে অবসরের পর আমার স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর আগে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসা চলাকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেয় আমার মেয়ে বেবি আক্তার। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর লাশ গ্রামে আনলে আমার ছেলে যখন বেবির কাছ থেকে টাকার কথা জানতে চায়, তখন সে স্বীকারই করেনি। পরে রবিবার রাতেই মেয়েরা লাশ রেখে পালিয়ে যায়। চিকিৎসাসেবার নাম করে আমার স্বামীর টাকাও নিয়ে নিল, আমাকে নিঃস্বও করে গেল।
একই অভিযোগ তুলে ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংক থেকে টাকাও নিয়ে গেল, স্বীকারও করতে চাইল না। এ কারণেই লোকজন আমাদের ভুল বুঝল।
এবি ব্যাংকের চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফারহান জামান জানান,মারা যাওয়া মনির আহমেদের ব্যাংক হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমেদ।