রোহান চিশতি, জাককানইবি প্রতিনিধি
প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী ও ৬০০ শিক্ষক- কর্মকর্তা- কর্মচারীর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা মাত্র একটি। ১ অ্যাম্বুলেন্সেই যেন আটকে থাকে তাদের ভাগ্য। কিছু সময়ের ব্যবধানে দুজন অসুস্থ হলেই বিপদ। কারণ অ্যাম্বুলেন্স অন্য রোগী নিয়ে থাকে ময়মনসিংহে। আবার হাঁপানির রোগী হলে থাকে অতিরিক্ত ভোগান্তি, কারণ অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন সিলিন্ডারও ঠিকমতো কাজ করে না। এমন সব অভিযোগে এখন অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টার ‘ব্যথার দান’ প্রাথমিক চিকিৎসাও দিতে পারে না। ফলে অসুস্থ হলে তাদের বাধ্য হয়ে যেতে হয় ২২ কিলোমিটার দূরের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরই মধ্যে আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
এছাড়া একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সের দেখাও মেলে না সবসময়। ময়মনসিংহের হাসপাতালে যেতে-আসতে অ্যাম্বুলেন্সটির সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে অন্য কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স না থাকার কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানান, কিছুদিন আগে রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী আহত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। কারণ অ্যাম্বুলেন্স তখন আরেক রোগীকে নিয়ে ময়মনসিংহে ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ডুবে আহত শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, পুকুরে ডুবে জ্ঞান হারানোর পর অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে আমাকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়ার সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার ঠিকভাবে কাজ করেনি। ফলে গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাইয়া ইসলাম সুচনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকায় জরুরি সেবায় দেরি হয় এবং মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। ১০–১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এটি অপ্রতুল। এছাড়াও রাতে হলে কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে যথাসময়ে সেবা পাওয়া যায় না।
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, যা জরুরি সময়ে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে রাতে কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না আসায় রোগীকে নিজ উদ্যোগে বাইরে নিতে হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দ্রুত অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স সংযোজন এবং ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি, যাতে কোনো প্রাণ ঝুঁকির মুখে না পড়ে।
ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম জানান, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না, প্রয়োজন একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট স্বল্পতার কারণে নতুন অ্যাম্বুলেন্স নিতে পারছে না। তবে অন্যভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আশা করি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।
অতিরিক্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, “অ্যাম্বুলেন্স সমস্যার কথা আমরা অনেক আগেই প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। বিষয়টির অগ্রগতি নিয়েও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)কে বিষয়টি অবগত করার পরও পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমানে আমরা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স আসলে আশা করি সংকট কিছুটা হলেও নিরসন হবে।