মাসুদ মান্নান: রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী সংলগ্ন আমুলিয়ায় আইচি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।কলেজ কর্তৃপক্ষই এ হামলায় ইন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের৷
এতে নারী শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫-২০ জন। হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে যে পাঁচটি কলেজকে নানা অনিয়মের অভিযোগে ব্ল্যাক লিস্টেড করা হয় আইচি মেডিকেল কলেজ সেগুলোর একটি। বিষয়টি জানার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিতে টানা সাতদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনও করে শিক্ষার্থীরা। এতেও কলেজ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে নি৷
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষার্থীরা কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (এমডি) সাথে আলোচনার দাবি তোলেন। এক্ষেত্রে নানা শর্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকে অনীহা প্রকাশ করেন আইচি মেডিকেল কলেজের এমডি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এরপরই বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। আইচি মেডিকেল কলেজের ম্যানেজার কামরুজ্জামান ও হাসপাতালের ম্যানেজার ইকবালের মদদে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
হামলার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী ফেস দ্যা পিপলকে বলেন,
‘আমাদের মেডিকেল কলেজ বিএমডিসি অনুমোদিত না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ৫ টি মেডিকেল কলেজ ব্লাক লিস্টেড। এর মধ্যে আমাদেরটাও ছিল। এই বিষয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে গেলেও উনি কোনো গুরুত্ব দেননি, হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছিলেন৷’
এই শিক্ষার্থী আরও জানান, ‘উনি(প্রিন্সিপাল) বলছেন এমডির সাথে কথা বলবেন, এটা উনার পার্সোনাল ব্যাপার৷ কিন্তু আমরা চাচ্ছিলাম মালিক পক্ষের সাথে সরাসরি কথা হোক, যাতে আমরা রেজিস্ট্রেশনটা পাই। বিএমডিসি থেকে কিছু নিয়মকানুন বলা হয়েছে যেগুলা পূরণ করলেই তারা রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দিবে৷ সেই প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গতকাল ১৮ তারিখ এমডি আসবেন। গতকাল আমরা অভিভাবকদের নিয়ে প্রিন্সিপাল ডা. লায়লা মেহজাবিন বানুর কাছে গেলে উনি জানান এমডি আসবেন। তখন আমরা অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীর একটি সমন্বিট টিম উনার সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু দুপুরের দিকে প্রিন্সিপাল জানান এমডি আসবেন না।
এ প্রেক্ষিতে আমরা প্রিন্সিপাল এবং অফিস তালা দিয়ে দিই৷ টিচারদের রেসপেক্টফুলি চলে যেতে বলি। টিচারদের সাথে আমরা কোনো ধরনের অশোভন আচরণ করি নি। কলেজের দরজা লাগানোর ১০ মিনিটের মধ্যেই বহিরাগতরা এসে আমাদের উপর হাময়া চালায়। এতে মেয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৫-২০ জন আহত হন। তারা এ সময় মেয়েদের সাথে অশোভন আচারণ করে।
তিনি জানান, হসপিটালের গেইট বন্ধ করলেও মেডিকেলের ম্যানেজার ইকবাল বহিরাগতদের আসার সুবিধা করতে আবারও গেইট খুলে দেন। তখন আমরা ডেমরা থানায় ফোন দিলে তারা পুলিশ পাঠালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷
হামলার ঘটনায় কলেজ প্রশাসন কোনো ধরনের আশ্বাস দেননি বলেও অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৩ তারিখ কলেজের এমডি আসতে পারে বলা হলেও নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি৷ এ মুহুর্তে আমাদের ক্লাসসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছেন। এ মুহুর্তে প্রধান দাবি স্থায়ীভাবে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা হোক। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। পরবর্তীতে এমডি আসার পর বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে আমরা বিচার চাইব।’
কলেজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করার ক্ষেত্রে নিজেদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, যখন আমাদের উপর হামলা চালানো হয় তখন হসপিটালের ম্যানেজার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন৷ উনারাই হামলাকারীদের ভেতরে আসতে সহায়তা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লুঙ্গি পরা যুবক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকছেন। এবং এলোপাতাড়ি ভাবে শিক্ষার্থীদের পেটাচ্ছেন।