আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা– এমন খবরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে আনন্দের জোয়ার বইতে দেখা গেছে। উপদেষ্টা পরিষদের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করে।
মিছিলটি শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল চত্বর থেকে। সেখান থেকে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গিয়ে থামে। পরে আবার শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান—জুলাই স্মৃতি হল, শান্তিনিকেতন হয়ে পুনরায় ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
আনন্দ মিছিলে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, মুখে নানা রকম স্লোগান—”এই মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো”, “নোবিপ্রবির একশন, ডাইরেক্ট একশন”, “লীগ ধর, জেলে ভর”, “ছাত্রলীগের কবর দে”, “মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”—প্রকম্পিত হয় পুরো ক্যাম্পাস।শিক্ষার্থীদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন এমন চিত্র দেখা গেছে।
শহীদ মিনারে উপস্থিত অনেক শিক্ষার্থী একে তাদের আন্দোলনের “প্রথম বড় অর্জন” বলে উল্লেখ করেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, “আন্দোলনের সময় আমাকে এবং আমার পরিবারকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বারবার হুমকি দিয়েছে। আজ সেই দানবীয় শক্তিকে নিষিদ্ধ করা হলো। আমরা এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত আনন্দিত। চাই খুব দ্রুতই এই নিষেধাজ্ঞার পূর্ণাঙ্গ প্রজ্ঞাপন জারি হোক এবং দলটির সব নেতা-কর্মীর বিচারের আওতায় আনা হোক।”
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, “আওয়ামী লীগ এক গণহত্যারী ফ্যাসিস্ট দল। আজ তাদের নিষিদ্ধ করা হলো, এটি জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয়। আমরা চাই, শুধু কার্যক্রম নয়, দল হিসেবেও যেন তাদের নাৎসি পার্টির মতো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করে অভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা হোক।”
রাত গভীর হলেও শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি। মিছিল শেষে শহীদ মিনার চত্বরে বসে শিক্ষার্থীরা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে মিছিল ছত্রভঙ্গ হলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনার রেশ থেকে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার খবরে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, দীর্ঘ সময়ের দমন-পীড়নের পর একটি বড় প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।