আওয়ামী লীগ সরকার দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রবিবার (৩ জুলাই) মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহের ২০২২-’২৩ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমনটা জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনের মূল অয়োজনে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা রাজনীতি করি দেশের জনগনের জন্য। আমার নির্বাচনে অংশগ্রহণকালে ঘোষণা করা দলের র্নিাচনী ইততেহারে দেশকে আর্তসামাজিকভাবে এগিযে নিয়ে যাবার কর্মপরিকল্পনা থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে এবং বাজেট প্রণয়ন করেছে, তখন তার নির্বাচনী ইশতেহারটা সামনে রেখে কতটুকু তার বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কতটুকু করতে হবে, তা ধরেই সবসময় কর্মনির্ধারণ করে থাকে, এক্ষেত্রে দলের জন্যও পৃথক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার সরকার আশু, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় করণীয় নির্দিষ্ট করে থাকে।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী তার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং কারোনাভাইরাসের আগ্রাসনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে। পাশাপাশি জাতির পিতার চালু করে যাওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের অনুসরণে দেশের সকল গৃহহীণকে ‘মুজিববর্ষে’ বিনামূল্যে একটি ঘর করে দেয়ার পকিল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে।
এ অনুষ্ঠানে বার্ষিক কর্মসম্পাদনে সাফল্য অর্জনকারি মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এবং ব্যক্তি বিশেষের মাঝে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন পুরস্কার ২০২২’ ও ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দোকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদনে শীর্ষ স্থান অর্জন করে। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কৃষিমন্ত্রণালয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
এর আগে, সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের সচিব এবং সিনিয়র সচিববৃন্দ নিজ নিজ দপ্তরের পক্ষে চলতি বছরের জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে একে একে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হাতে তা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ব্যক্তিগত বিভাগে, প্রাক্তন খাদ্য সচিব ড. মোসাম্মাৎ নাজমুনারা খানম এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (অবকাঠামো ও উন্নয়ন) মো. মামুন আল রশিদ সততা অনুশীলনে তাদের অসামান্য ভূমিকার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।
শুদ্ধাচার প্রয়োগে খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে জনগণের সমর্থনে টানা ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দেশটকে কিছুটা হলেও তাঁর সরকার এগিয়ে নিযে যেতে পেরেছে, অন্তত এক সময়কার বুভুক্ষ জনগণের জীবন মানের পরিবর্তন হয়েছে। আগে কোন সমাবেশে গেলে হাড্ডি কঙ্কালসার জনগণ সমানে হাত পেতে দিয়ে পেট আর মুখ দেখিয়ে যে অন্নের জোগানের কথা বলতো তাদের সে চাহিদারও আজকে পরিবর্তন ঘটেছে।
তিনি জানান, সকলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই তাঁর সরকার আজ দেশকে এই অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, উন্নত দেশও যেটা পারেনি সেটা আমরা করেছি, বিনা পয়সায় টার্গেটেড জনগণকে টিকা দিয়েছি, এখন বুষ্টার ডোজও দেয়া হচ্ছে। সকলেই এই বুষ্টার ডোজ নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এরমধ্যেই দেশে বন্যার আগমন ঘটেছে, যা সরকার যথাযথভাবে মোকাবিলা করছে। পাশাপাশি বহিঃবিশ্বের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা, এই সবকিছুর মাঝেই সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্যেও পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর পর দীর্ঘ সামরিক শাসন আমাদের এমভাবে পরনির্ভর করে ফেলেছিল যে, আমাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা এবং স্বকীয়তার কথা মানুষ যেন ভুলতে বসেছিল। আর মানুষ যখন তার আত্মবিশ্বাস হারায় তখন সেই জাতিকে টেনে তোলা খুব কষ্টকর। কিন্তু জাতির পিতা বাংলার মানুষকে চিনতেন বলেই তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলে গিয়েছিলেন-‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনিও জাতির পিতার কন্যা হিসেবে এই মানুষদের পাশে থাকার সুযোগে যতটুকু তাদের চিনতে পেরেছিলেন সেই ভরসাতেই বলেছিলেন নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন। আর এই একটি সিদ্ধান্তই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আজকে উজ্জ্বল করেছে।
আজ সেই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি, এটা শুধু ইট, কাঠ কংক্রিটের একটি স্থাপনা নয়, এটি আমাদের আত্মমর্যাদার একটি নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে মর্যাদার একটি নিদর্শন, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে পণ্য আসার পরিমান অনেকাংশে বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পাইকারী বাজার ও কাঁচাবাজার হিসেবে কারওয়ান বাজারের ওপর চাপ কমিয়ে রাজধানীর বাইরের অংশে আমিন বাজার, কাঁচপুর, মহাখালী, পোস্তগোলা বা কেরানীগঞ্জসহ চারটি স্থানে চারটি বাজার সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।