আদর্শ প্রকাশনীর ভিন্নমতের বই প্রকাশের জেরে অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ না দেয়া কেন্দ্র করে কদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের সাহিত্য অঙ্গনে। বইমেলার নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তে বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত।
আদর্শ প্রকাশনীর স্টল না পাওয়ার প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, মানবাধিকার এবং মানুষের মর্যাদার পক্ষে যারা লড়ে যাচ্ছেন তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের দ্বিধা করবেনা।
স্থানীয় সময় বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে সম্প্রতি পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলা এবং সরকারের সমালোচনা ভিত্তিক বই প্রকাশের অপরাধে একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া ইস্যুতে প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র।
ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী সুশীল সমাজের প্রতিনিধির হামলার শিকার হওয়া এবং মতপ্রকাশে সরকারের বাধাদান প্রসঙ্গে জানতে চান, “বাংলাদেশে সরকারের সমালোচকরা আবারও হামলার শিকার হচ্ছে, এমনটাই দেখতে পাচ্ছি। সুশীল সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি এবং পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের গাড়ির ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। আপনি নিশ্চয় জানেন সম্প্রতি সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরের সময় রিজওয়ানার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রকাশনী আদর্শকে বইমেলায় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ভিন্নমতের লেখকদের বই থাকায় এবং বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বাবার সমালোচনা করার কারণে প্রকাশনীটিকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এমনকি ভারতের পশ্চিম বাংলার বইমেলাতেও আদর্শ প্রকাশনীর অংশগ্রহণকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা যেটা দেখতে পেলাম সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং এশিয়ার অন্য দেশ সফর করেছেন এবং মানবাধিকার সুরক্ষা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। আপনার মন্তব্য কী?”
জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, “নিশ্চয়ই। আমি দুটি বিষয়েই বলতে চাই। প্রথম প্রশ্নের জবাবে যেটা বলতে চাই সেটা হলো-যারা মানবাধিকার এবং মানুষের মর্যাদার পক্ষে লড়ে যাচ্ছেন তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের দ্বিধা করবেনা। সারাবিশ্বে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারে প্রতি আমাদের অবস্থান সর্বাগ্রে। মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন- এ মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, এবং স্থিতিশীলতার যোগসূত্র রয়েছে। আমরা এসব সমুন্নত রাখতে সর্বদা সচেষ্ট।
আপনার প্রকাশক সংক্রান্ত দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই -আমরা সবসময়ই গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছি। এগুলোই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।”
পরবর্তীতে মুশফিকুল ফজল আনসারী ২য় প্রশ্নে বলেন, আপনি সম্ভবত জানেন, বাংলাদেশী সরকার বলেছে রাষ্ট্রবিরোধী উপাদানের জন্য তারা বেশকিছু ওয়েবসাইট, আমার মনে হয় তাদের বর্ণনা অনুসারে প্রায় ২০০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার কোনো কোন মন্তব্য আছে? এটা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়?
জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, অবশ্যই যেকোনো ধরনের সেন্সরশিপ বা এই ধরনের তথ্য চ্যানেল ব্লক করা গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমি সেই সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদনটি দেখিনি, তবে আমরা দেখব যে আমরা আপনাকে সেই বিষয়ে আরও নির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারি কিনা।