কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,জামায়াতের অনেক সমর্থক থাকতে পারে কিন্তু এই সমর্থক দিয়ে আন্দোলন করা অনেক কঠিন। আন্দোলন করতে হলে জনগণ লাগে। জনগণ ছাড়া আন্দোলন হয় না। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল। কেউ আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে সাতক্ষীরার উপজেলার হেলাতলা মৌজার সরিষা মাঠে স্থানীয় মৌ-চাষি কবিরুল ইসলামের প্রকল্প পরিদর্শন শেষে এক কৃষক সমাবেশের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নৈরাজ্য-নাশকতা সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানো যায় না।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছর বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হয় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা। এ দেশের মানুষ আগে সরিষার তেল খেত। কেউ সয়াবিন ও পাম তেল চিনত না। দেশের সরিষা দিয়েই তেলের চাহিদা মিটত। বিদেশ থেকে যদি তেল আমদানি করা না লাগতো, তাহলে ওই টাকা দিয়ে দেশের অনেক উন্নয়ন করা যেত, কিন্তু আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় তেল আমদানির জন্য।
আমাদের বিজ্ঞানীরা সরিষার নতুন যা আবিষ্কার করেছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সেই জাতগুলো হলো বারি-১৪, বারি-১৮ এবং বিনা-৯। এই জাতগুলো চাষ করে কৃষক বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ ফলন পাচ্ছে। আগে যে সরিষার চাষ হতো তার ফলন এক থেকে দেড় মণের বেশি না।
ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরিষা ছাড়াও আমাদের বিজ্ঞানীরা ধানের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে। এই ধান রোপণ করতে হয় শ্রাবণ ভাদ্র্র মাসে। নতুন এই ধানের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। সরিষা চাষ করতে সময় লাগে ৮০ দিন। এই ৮০ দিনে বোরোর আবাদও কম হবে না আবার আমনের আবাদও কম হবে না। আমন ও বোরোর মাঝামাঝি সরিষা একটি অতিরিক্ত ফসল। অতিরিক্ত মুনাফা। সরিষা চাষ করে একজন চাষি বিঘা প্রতি চল্লিশ থেকে ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা পেতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সরিষা চাষের এই সম্ভাবনাকে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আগামী বছরের মধ্যে ভোজ্য তেল বাবদ আমদানি ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে দশ হাজার কোটিতে আনবো। এজন্য আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও অনুশাসনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের সার দিচ্ছি, বীজ দিচ্ছি ও কৃষি উপকরণ দিচ্ছি।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরিষার মাঠ দেখলে মনে হয় আদিগন্ত হলুদ রঙের চাদর বিছানো। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, মন শীতল হয়ে যায়। হলুদ রঙা মাঠে সিনেমার শুটিং করতে মন চায়।
কৃষকদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষকরা যাতে উন্নত জীবন পায় সেজন্য বর্তমান সরকার সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আমরা তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। এ দেশকে আমরা ফলে ফুলে ভরে তুলব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সজিব হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ আদনান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস, পৌর মেয়র মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল, কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দীন মৃধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি কাজী আসাদুজ্জামান শাহাজাদা, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আলম মল্লিক রবি প্রমুখ।