বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হতাশা প্রকাশ করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এখনো অনেকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন না বলে। তিনি বলেন, যে জাতি নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না, সে জাতিকে কে দাঁড় করাবে। আপনাদের (সাংবাদিক) বলছি, আপনারা কেউই বাঁচবেন না।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা জানান।
গত সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় নিবর্তনমূলক আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি।
এ ছাড়া নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে কর্মসূচি দেওয়া, বেআইনিভাবে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিরোধী দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের হামলা এবং পুলিশের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায়।
এ সভায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য এই দেশের, এত উন্নয়ন, চতুর্দিকে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের জন্য যে আধুনিক ব্যবস্থা দরকার, সেই ব্যবস্থাগুলো এখানে নেই। ফায়ার ব্রিগেডের সেই সরঞ্জামই নেই। সরকারের গুরুত্ব হচ্ছে কোনখানে কমিশন বেশি পাবে, কোনখানে টাকার উপার্জন বেশি হবে—সেই জায়গায়। এর (অগ্নিকাণ্ড) জন্য দায়ী সম্পূর্ণভাবে সরকার।
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তগুলো জানানোর পর একজন সাংবাদিক মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল। আজকেও নির্বাচন কমিশন…। প্রশ্ন শেষ করার আগেই মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা কোনো কথা বলব না, এটা তো আপনারা জানেন। অযথা এই প্রশ্ন করে তো কোনো লাভ নাই। আপনারা বরং প্রশ্ন করতে পারেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে, সেটা তো করলেন না।
আইনমন্ত্রী (আইনের ২১ ও ২৮ নম্বর ধারা নিয়ে) কী কথা বলেছেন, সেটা তো বললেন না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন, যে কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল অ্যাক্ট নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে যে সুপারিশ করা হয়েছে, সে ব্যাপারেও কেউ প্রশ্ন করলেন না। আপনারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আছেন। আপনারা জিনিসটা (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন না। বিশেষ করে, তরুণ সাংবাদিকদের এটা আরও বেশি করে নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আপনাদের সহকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, সিকিউরিটি অ্যাক্টে হেয় করা হচ্ছে, বাট নো বডি রেসপন্ডিং। কোথায় যাবে এ জাতি, বলেন। যে জাতি নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না, সে জাতিকে কে দাঁড় করাবে। আপনাদের বলছি, আপনারা কেউই বাঁচবেন না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জার্মান মিডিয়া হাউস “ডয়চে ভেলে” কর্তৃক র্যাবের ওপর একটি ডকুমেন্টারি (তথ্যচিত্র) বেরিয়েছে। এটা খুব সেনসিটিভ হওয়ার কারণে আমাদের বেশির ভাগ পত্রিকা নিউজ করেনি। সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) হলেও এটা তো বাস্তবতা। এটাকে এখন পর্যন্ত অস্বীকার করা হয়নি। আমরা জানি, এ ধরনের ডকুমেন্টারি যখন কোনো মিডিয়াতে আসে, তারা কিন্তু সমস্ত দায়িত্ব নিয়েই কাজটা করে। এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই এ কাজগুলো করছে। আপনারা দেখেছেন (ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন) যে কী ভয়ংকর।
তিনি বলেন, যদি এমন হয় সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি নির্দেশ দিয়ে এ সমস্ত কাজ করা হয়, তাহলে এ ধরনের সংস্থাগুলো কী ভয়ংকরভাবে জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। যে কারণে র্যাবের ওপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যদিও এটা আমাদের জন্য লজ্জার।