নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০২৫ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। তবে এ পুরস্কারকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে সিলেটের এক আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকের মন্তব্যকে ঘিরে।
স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল সিলেট টুডে–এর সম্পাদক কবির য়াহমদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, “আবরার ফাহাদের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার আবেগ আর ফাইজলামির চূড়ান্ত রূপ। এটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার রে!”
তিনি আরও লিখেছেন, “বানরের গলায় মুক্তার মালা। এখানে উভয়পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য—যারা দিলো পুরস্কার, আর যাকে দিলো, দুইপক্ষই অযোগ্য। তাজ্জব হয়ে গেলাম, এভাবেও সম্ভব!”
এ নিয়ে তার আরও একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আবরার ফাহাদের নাম বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র আসিফ মাহমুদ। পুরো তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি। তালিকায় যদি সাঈদ-মুগ্ধ-স্যালুটওয়ালা রিকশাচালকের নামও দেখেন, অবাক হবেন না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বেসামরিক সর্বোচ্চ পদক স্বাধীনতা পুরস্কারকে যদি আবরার ফাহাদ পর্যায়ে নামাতে পারে, তাহলে আবু সাঈদ-মুগ্ধ পর্যায়েও নামাতে পারবে। শিশুতোষ সিদ্ধান্ত।”
কবির য়াহমদের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে তার বক্তব্যকে অযৌক্তিক ও কটূক্তিমূলক বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় এক সাংবাদিক লিখেছেন, “স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে আলোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পরাজয় শুধু হাসিনার নয়, বরং ভারতেরও বড় পরাজয়। ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে কি ভুল করেছে বর্তমান সরকার?”
এ বিষয়ে আরও সমালোচনা করে বলা হয়, “ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের একজন শহীদকে নিয়ে এতটা তাচ্ছিল্য করা, তাকে ‘বানর’ বলে অপমান করা কতটা নৈতিক? শুধুই কবির য়াহমদ নন, সিলেটে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছেন, যারা স্বৈরাচারী সরকারের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন।”
বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, আবরার ফাহাদ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন, আর সেই শহীদকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করার মাধ্যমে মূলত স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই অপমান করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কবির য়াহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফেস দ্যা পিপল। কিন্তু তার ব্যক্তিগত দুটি ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
পরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জাইলে, সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ফেস দ্যা পিপলকে বলেন, এই নামে তো কাউকে ট্রেস করতে পারিনি। খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি৷
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’