৭ অক্টোবর সারাদেশের মানুষ এক নির্মম মৃত্যুর সাক্ষী হয়। গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ। দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসীর হাতে মৃত্যু হয়েছে বুয়েটে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের। সেই আবরার স্বাধীন- সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে প্রাণ হারানো শহিদ হয়েই জাতির হৃদয়ে রয়ে গেলেন। শুধুমাত্র ট্যাগ আর হত্যার রাজনীতি কীভাবে একটা সাধারণ দেশপ্রেমিক সন্তানকে হত্যাযোগ্য করে তোলে আবরার হত্যাকাণ্ড ছিল তার একটা জ্বলন্ত প্রমাণ।
গতকাল কারামুক্ত হন জামায়াত নেতা এটিএম আজহার। তার মুক্তিকে কেন্দ্র করে শাহবাগ নিয়ে মন্তব্য করেন বুয়েট ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার আবরার ফাহাদের ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ। ফাইয়াজ লিখেন, ‘এ টি এম আজহারের মুক্তিতে শাহবাগের কণ্ঠে আজ পরাজয়ের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। একাত্তরের প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ চিরদিনের জন্য ধ্বংস করেছে এ শাহবাগই।’
এই স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে একটি গণমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে। এই ফটোকার্ডটি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহিম লেখেন, ‘জাশির কুত্তা আবরার ফাহাদকে হত্যা কেন জায়েজ ছিল দেখ তোরা।’
আবারার ফাহাদকেও হত্যা করেছিল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। একইরকমভাবে তার ভাইকেও দেওয়া হল হত্যার হুমকি। সেই ছাত্রলীগের কায়দায়।
গতকাল শাহরিয়ার ইব্রাহিমের এ মন্তব্যের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন নেটিজেনরা। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে শহীদ হওয়া একজন ভুক্তভোগীকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আচরণের সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে ছাত্র ইউনিয়ন কী আওয়ামী লীগের টিম বি হয়েই কাজ করছে!
তবে সমালোচনার মুখে বুধবার রাতে একটি বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে মন্তব্য করা শাহরিয়ার ইব্রাহিম ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ নন। তার বক্তব্যের দায়ভার ছাত্র ইউনিয়নের নয়। ইব্রাহিমের বক্তব্য ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন করে না।
ইব্রাহিমকে যুবদলের বলেই অভিহিত করেছে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ যৌথ বিবৃতিতে শাহরিয়ার ইব্রাহিমের বক্তব্য প্রত্যাখান করেন।
তারা বলেন, আবরার ফাহাদকে হত্যার পর ছাত্র ইউনিয়ন সবার আগে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছে। বিচার নিশ্চিতে রাজপথে থেকেছে। তাই শাহরিয়ার ইব্রাহিমের বক্তব্যকে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক বক্তব্য হিসেবে ধরে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শাহরিয়ার ইব্রাহিমের বক্তব্যের দায়ভার শুধুমাত্র তার। তিনি এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গিয়েছে। ইব্রাহিমের বক্তব্যকে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার সুযোগ নেই। আমরা ইব্রাহিমের বক্তব্যের নিন্দা জানাই।
একই সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন, এটিএম আজহারের মুক্তিকে কেন্দ্র করে আবরার ফাহাদের ছোটভাই আবরার ফাইয়াজের মন্তব্যকে নিন্দনীয় বলেও মন্তব্য করেন।