বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা ক্ষমতাসীন তারা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট। আর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াইটা খুব সহজ নয়। এখানে মৌলিক পার্থক্য হলো, অস্ত্র-শস্ত্র, রাষ্ট্র ক্ষমতা সবকিছুকে নিয়ে সে আক্রমণ করে। আর আমরা জনগণকে নিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। সবচেয়ে বড় সফলতা হলো দেশের সব মানুষকে এক করতে পেরেছি। দেশের রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ (ডান-বাম) সবাইকে এক করতে পেরেছি। এখন শুধু চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপাসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী প্রমুখ।
আজকে দেশের রাজনীতি চরম সঙ্কটে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে আমরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি। এ সঙ্কট ও শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের মানুষ ও দল এবং আমরা যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি তারা মোকাবিলা করছি। এসবকে মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যেসব নেতাকর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের অবদান বৃথা যাবে না।
এ অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, জেডআরএফ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ডা. এএইচএস পারভেজ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, ডা. এম এ সেলিম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, অধ্যাপক ড. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক আতাউর রহমান, আমিরুল ইসলাম কাগজী, ড. এমতাজ হোসেন, ড. আবু জাফর খানসহ অনেকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। এখন চিৎকার করে বলছেন, ওটা নাকি আজিমপুর কবরস্থানে চলে গেছে। কবর দিয়ে দিয়েছেন। যেটার কবর হয়ে যাবে, সেটা নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করলেন কেন? আওয়ামী লীগ হরতালের সময় বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ মেরেছে- এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এতগুলো মানুষকে মারলেন কেন?
তিনি বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা মেনে নিয়ে সে সময় বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়েছিল।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ জানে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সুতরাং তারা ওটাতেই লেগে আছে সংবিধানের মধ্যেই তাকে নির্বাচন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে এমন সংস্কৃতি হয়েছে যে একটা দল আরেকটা দলকে বিশ্বাস করে না। ৫২ বছর পরও চিন্তা করতে হয় এই সরকারের অধীন নির্বাচনে ঠিক হয় না। পাকিস্তানও নির্বাচন পদ্ধতি উন্নতি করে ফেলেছে। নেপাল-মালদ্বীপ সুষ্ঠু করে ফেলেছে। এখন শ্রীলঙ্কাও। তাহলে আমরা কেন পারছি না। আমরা পারছি না একটা রাজনৈতিক দলের কারণে, সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কারণে।
সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুগপৎ আন্দোলন করছেন না, তারাও এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি, বাম ফ্রন্ট, জামায়াতে ইসলাম, চরমোনাই পীর- সবাই বলছে এ সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি জাতীয় পার্টিও বলেছে।
সরকারকে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, এখন সময় আছে, সেফ এক্সিট নিন। পদত্যাগ করে সরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নতুবা জনগণের আন্দোলনে আপনাদের করুন পরিনতি ভোগ করতে হবে।
সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- বিকল্প ধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এস এম শাহাদত হোসেন, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপ ভাসানীর এস এম শাওন সাদেকি প্রমুখ।