রাজধানীর ডেমরার বামৈল ব্যাংক কলোনীর সাধুরমাঠ এলাকায় আম চুরি ঠেকাতে গাছে অবৈধভাবে বিদ্যুতায়িত করে রাখা হয়েছিল। দুই শিশু ওই গাছের নিচে আজ বুধবার দুপুরে আম কুড়াতে যায়। গাছে হাত দিতেই বিদ্যুতস্পর্শে প্রাণ হারান দুই সহোদর আরিয়ান (৮) ও রায়হান (৪)।
সাধুরমাঠ এলাকার ইসমাইল মুহুরির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে গাছের মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা৷
দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ইসমাইল মুহুরির স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬৫), তার মেয়ে নিপা আক্তার (৪০), জেরা (৩০) ও সারাকে (২০) আটক করেছে ডেমরা থানা পুলিশ।
আরিয়ান-রায়হানের মা-বাবা দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে আছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভ্যানচালক বাবা মারফত মিয়ার বুকফাঁটা আর্তনাদ–‘আমার পোলা দুইটার কী দোষ ছিল। আম কুড়াতে গিয়ে দুইভাই একসঙ্গে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। কী নিয়া বাঁচমু আমরা।’ আম গাছের মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ঘটনা নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ইসমাইল মুহুরির বাগান বাড়িতেই তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা বাস করেন। তার দুই ছেলে দিপু ইসলাম ও টিপু ইসলাম। তাদের বাড়িতে বিভিন্ন ফলদ গাছ রয়েছে। কেউ যেন ফল চুরি করতে না পারে সেজন্য গাছে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে রাখেন তারা। গাছের চারপাশেও জিআই তার দিয়ে ঘেরা। ওই তারও বিদ্যুতায়িত করা।
শিশু দুটির বাবা মারফত মিয়া জানান, বামৈল ব্যাংক কলোনী এলাকায় তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বাস করেন। তার স্ত্রী অ্যানি বেগম ছাতার কারখানার শ্রমিক। তিনি ভ্যান নিয়ে বের হয়ে যান সকালেই। তার স্ত্রী কারখানায় যাওয়ার সময় দুই সন্তান আরিয়ান ও রায়হানকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। আজও তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন অ্যানি বেগম। দুপুরে মায়ের অগোচরে দুই শিশু বেরিয়ে পাশেই দিপুর বাড়ির আম বাগানে যায়।
ঐ এলাকার ভাড়াটে রাজমিস্ত্রী ইয়াসির আরাফাত জানান, দুপুর ১টার দিকে তিনি নিজের বাসার জানালা দিয়ে দেখেন–আম গাছের নিচে কচুগাছের মধ্যে দুই শিশু পড়ে আছে। কচুগাছের মধ্যে তাদের পড়ে থাকতে দেখে ছুটে যান তিনি। শরীরে হাত দিয়ে ডাকাডাকি করেন। কোনা সাড়া না পেয়ে চিৎকার করে আশপাশের লোকজন ডাকেন। এরপর দুই সহোদরকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বাগানের মালিক দিপু ও টিপু বেশকিছুদিন ধরেই গাছে ও এর আশপাশে বিদ্যুতায়িত করে রেখেছেন। তিনদিন আগে জিআই তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’টি কুকুর মারা গেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী বাড়ির মালিকদের জানালে দিপু ও তার ভাই টিপু তা আমলে নেননি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ডেমরা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাড়ির বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারি কমিশনার মধুসূদন দাস জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চারজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।