গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল, ২০২৩ পাসের ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমেনি, বরং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, ‘সরকার আরপিও সংশোধন আমাদের প্রস্তাবমতো করেছে। ইসি তার নিজের অবস্থানকে আরো সংহত, শক্তিশালী করার জন্যে সংশোধনগুলো চেয়েছিল। সরকার তাতে সম্মত হয়েছে, সংসদ সম্মত হয়েছে। এতে করে আমাদের ক্ষমতা বর্ধিত হয়েছে।’
আজ সোমবার (১০ জুলাই) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আরপিও সংশোধনী বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার আমাদের সম্মান করেছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘যে যে সংশোধন চেয়েছিলাম, সরকার তাতে সম্মত নাও হতে পারতো। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তাতে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আমাদের প্রস্তাব পাস হয়েছে।’
সিইসি বলেন, নতুন সংশোধনীতে ভোট শেষে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ভোট বাতিল ও গেজেট প্রকাশ আটকে দেয়ার ক্ষমতা পেয়েছে ইসি। আরপিও যেসব প্রস্তাব করা যায়, তা ১১ মাস আগে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদিত হয়। তাতে সামান্য পরিবর্তনও করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ইসির মতামত নিয়েছে, বিশেষ করে ৯১-এ নিয়ে। আমরা বলেছিলাম- (অনিয়মের কারণে) যেকোনো পোলিং সেন্টার বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ বাতিলের বিধান। সরকার আমাদের মতামত চেয়েছে; যেখানে প্রভাবিত হবে, যে কেন্দ্রগুলোতে বাধাগ্রস্ত হবে সে কেন্দ্রগুলো বাতিল করে দেয়া হোক। আমরা সম্মত হয়েছি, এটা যৌক্তিক। এটি সম্পূর্ণ নতুন দফা।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক মাসে আইনটি নিয়ে নানা বক্তব্য এসেছে। তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। এজন্যে যেসব ব্যাখ্যা, মন্তব্য এসেছে তার সবগুলো সঠিক নয়। এজন্য ইসির পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করতে চাই। কমিশন বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে- এমন মন্তব্যও এসেছে। গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল, ৯১ এ দফায় সংশোধন হয়েছে বলে কথা এসেছে। সরকার নিজের সুবিধার জন্য আইন সংশোধন করেছে; এসব কথার ব্যখ্যা দেয়া প্রয়োজন।’
৯১-এ ধারায় কোনো পরিবর্তন হলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হতো জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা- যেখানে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যেকোনো একটি, দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কনস্টিটিউয়েন্সির ভোট আমরা বাতিল করে দিতে পারবো। সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে।’
৯১-এ-তে নতুন দফা সংযোজিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন দফা সংযোজন করে বলতে চেয়েছিলাম- নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানোর পর ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। সেখানে আমরা বলেছিলাম- কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তারপরও কোনো কেন্দ্র বা কোনো কনস্টিটিউয়েন্সি নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে করতে পারবে, গেজেট উইথহেল্ড করে রেখে। সেখানে সংসদ বলেছে- আমরা গেজেট উইথহেল্ড করতে পারবো। সেক্ষেত্রে কনস্টিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে, সেসব কেন্দ্রে ফলাফল বাতিল করতে পারবে; এতটুকু। এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা আমরা সঠিক মনে করি না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা তিনটি জায়গায় ইলেকশন শব্দটাকে পোলিং শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি। এটা হচ্ছে ক্লারিক্যাল কারেকশন। কারেকশন আর এমেন্ডমেন্ডে এর মধ্যে ফারাক রয়েছে। এমেন্ডমেন্ডের মধ্যে নীতিগত এলিমেন্ট থাকে, কারেকশনটা হচ্ছে জাস্ট সংশোধন। এটাকে নিয়ে অপব্যাখ্যা করাটা দুঃখজনক মনে করি। আমরা পুরো জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন চাই। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক, বিভ্রান্তকর মন্তব্য করে ইসিকে হেয় করা বাঞ্ছনীয় নয়। কমিশনকে গঠনমূলক সাজেশন্স দিয়ে সহায়তা করলে আমরা উপকৃত হবো।’