বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিশুদের শিক্ষাদানের বিষয়টি এবার চরম সংকটের মুখে পড়েছে। ইউনিসেফ পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বৈশ্বিক সহায়তা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় সংস্থাটি এক হাজারেরও বেশি শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছে। এতে শিশুদের শিক্ষাদান ঝুকিতে পড়েছে।
বুধবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক সংকটের ফলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির ফলে লাখ লাখ শিশু শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় বড় ধরনের কাটছাঁটের পর ইউনিসেফ বাধ্য হয়ে ১,১৭৯ জন শিক্ষক-কর্মীর চুক্তি বাতিল করেছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানায়, বৈশ্বিক সাহায্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আশাবাদী যে, বাড়তি সহায়তা ফিরে আসবে এবং প্রতিটি শিশুর জন্য তাদের প্রাপ্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমরা জানি, রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন কতটা সংকটপূর্ণ– তারা অনেকেই ইতোমধ্যে মানসিক আঘাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও নিরাপত্তার অভাবে জর্জরিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামসুদ দৌজা জানান, শিক্ষক ছাঁটাইয়ের আগে ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত ছিলেন।
বর্তমানে ঈদের ছুটির কারণে শরণার্থী শিবিরের স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে জুন মাসের শেষে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে যদি জরুরি অর্থায়ন না আসে, তাহলে আরও অনেক শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের শিকার হতে পারে। এতে করে শিশুদের জন্য একটি স্থায়ী শিক্ষা সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। ট্রাম্প প্রশাসন অধিকাংশ বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করেছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ওপর।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে রোহিঙ্গা প্রজন্ম এক ‘সব হারানো প্রজন্মে’ পরিণত হতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন।