আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একাধিক টুইট বার্তায় জাওয়াহিরি জীবিত আছেন এমন দাবি করা হলেও, এর পক্ষে শক্ত প্রমাণ এখনো উপস্থাপন করেনি আল-কায়েদা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, আয়মান আল জাওয়াহিরি ছিলেন এই গোষ্ঠীর মূল মতাদর্শী এবং পরিকল্পনাকারী।
বৈশ্বিক গণমাধ্যম এবং মার্কিন সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে কেনিয়া এবং তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা আর বহুল আলোচিত ৯/১১ হামলায় ৭১ বছর বয়সী এই মিশরীয় চক্ষু চিকিৎসকের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। এছাড়া আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নিহত হওয়ার দুই মাস পর তাকে গ্রুপের নেতা হিসেবে নামকরণ করা হয়।
ওসামা বিন লাদেন একটি বিশিষ্ট সৌদি পরিবারে একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। আর লাদেনের ঠিক বিপরীত অবস্থানে ছিলেন আল জাওয়াহিরি। ওসামা বিন লাদেন আল-কায়েদাকে ক্যারিশমা এবং অর্থ সরবরাহ করেছিলেন, কিন্তু আল জাওয়াহিরি তার কৌশল এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে আল-কায়েদাকে শক্তিশালী করেন।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সিকিউরিটি স্টাডিজের একজন অধ্যাপক এবং বিশেষজ্ঞ ব্রুস হফম্যান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, “বিন লাদেন সবসময় সব ব্যাপারে তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।”
১৯৫১ সালে কায়রোর একটি বিশিষ্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আল জাওয়াহিরি। ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমামের নাতি ছিলেন জাওয়াহিরি।
ফার্মাকোলজির অধ্যাপকের ছেলে আল-জাওয়াহিরি মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রেফতার হন। তিনি মিশরীয় লেখক সাইয়্যেদ কুতুবের বিপ্লবী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। ৭০ এর দশকে কায়রো ইউনিভার্সিটির মেডিসিন অনুষদে আল জাওয়াহিরি তার পড়াশোনা শেষ করেন।
১৯৮১ সালে মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতকে হত্যার অভিযোগের মুখোমুখি আদালতের খাঁচায় দাঁড়ানোর সময় প্রথম আলোচিত হন আল জাওয়াহিরি।
সাদা পোশাক পরা আল-জাওয়াহিরি চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমরা আগেও নিজেদের জীবন ত্যাগ করেছি এবং ইসলামের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখনও আরও ত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছি।”
ওই একইসময় অবৈধ অস্ত্র রাখার জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন তিনি কিন্তু হত্যার মূল অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন। তার কারাবাসের সময়, তাকে প্রচন্ডভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
প্রশিক্ষিত এই চক্ষু সার্জন তার মুক্তির পরে পাকিস্তানে যান যেখানে তিনি সোভিয়েত বাহিনীর সাথে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে আহত মুজাহিদিন যোদ্ধাদের চিকিত্সার জন্য রেড ক্রিসেন্টের সাথে কাজ করেছিলেন। তখনই তিনি বিন লাদেনের সাথে পরিচিত হন, যিনি আফগান প্রতিরোধে যোগ দিয়েছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ১৯৯৭ সালে মিশরের লুক্সর শহরে বিদেশী পর্যটকদের উপর হামলার সাথেও যুক্ত ছিলেন এই আল-কায়েদা নেতা। এর দুই বছর পর, ১৯৯৯ সালে একটি মিশরীয় সামরিক আদালত আল-জাওয়াহিরিকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
ততক্ষণে তিনি বিন লাদেনকে আল-কায়েদা গঠনে সহায়তা করেছিলেন এবং কয়েক বছর ধরে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে লুকিয়ে আছে। ৯/১১ এর পরের দশকে, মাদ্রিদে ২০০৪ সালের ট্রেন বোমা বিস্ফোরণ এবং লন্ডনে ২০০৫ সালের ট্রানজিট বোমা হামলা সহ ইউরোপ, পাকিস্তান এবং তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে আল-কায়েদার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। আর এর সবের পেছনে আল জাওয়াহিরিকেই দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
২০১১ সালের মে মাসে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ১৬ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কায়েদার দায়িত্ব নেন জাওয়াহিরি। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে থাকা জাওয়াহিরিকে ধরিয়ে দিতে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ওয়াশিংটন।