ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে এবার জাতিসংঘে ভোটাভুটিতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসন। তিন বছর ধরে চলে আসা এই যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার মধ্যেই আমেরিকার এই পদক্ষেপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন এই যুদ্ধ নিয়ে তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করল। খবর বিবিসি, রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের তিন বছর পূর্তিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের বিষয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। যার বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয়ান প্রস্তাবে মস্কোর কর্মকাণ্ড নিয়ে নিন্দা এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানানো হয়। কিন্তু এতে শুরুতেই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করে।
সোমবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় মার্কিন কূটনীতিকরা “রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের” সময় প্রাণহানির শোক প্রকাশ করে এবং এর দ্রুত অবসানের আহ্বান জানিয়ে তাদের সীমিত প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে এই বিভেদ উন্মোচিত হয়।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা রাশিয়াকে তার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের জন্য দায়ী করেন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে আরও বিস্তারিত একটি প্রস্তাব পেশ করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউরোপীয় প্রস্তাবটি ৯৩ ভোটে পাস হয়। কিন্তু রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরিসহ ১১ দেশের সঙ্গে এই প্রথমবার আমেরিকা এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। অন্যদিকে ভারতসহ ৬৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের আগের প্রস্তাবগুলির তুলনায় অনেক কম সমর্থন পাওয়া এই প্রস্তাবে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এতে জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেসামরিক জনগণসহ ব্যাপক ধ্বংস এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, উত্তেজনা হ্রাস, দ্রুত শত্রুতা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে রাশিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাব ১০ ভোটে পাস হলেও এতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস এবং স্লোভেনিয়া।
জাতিসংঘে আমেরিকার ভারপ্রাপ্ত দূত ডরোথি ক্যামিল শিয়া মার্কিন প্রস্তাবটিকে ‘একটি সহজ ঐতিহাসিক বিবৃতি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের সমাপ্তির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেই এই পদক্ষেপ। এটি সামনের দিকে তাকায়, পেছনের দিকে নয়।
বিবিসি বলছে, এটা খুবই বিরল ঘটনা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কথিত ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে এতটা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রান্সআটলান্টিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক এক প্রকার তলানিতে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে তিনি মস্কোকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, তাতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য শোক প্রস্তাব ও এ যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ইউরোপের কূটনীতিকরা তাদের প্রস্তাবে এ যুদ্ধের জন্য রাশিয়ারকে অভিযুক্ত করা এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
গত সপ্তাহে, উক্রেনের জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছিলেন যে জেলেনস্কি ইউক্রেনে অত্যন্ত অজনপ্রিয়। কিয়েভকে ছাড়াই সৌদি আরবে রাশিয়ান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনার একদিন পর তিনি জেলেনস্কিকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য “দ্রত পদক্ষেপ” নেওয়ার আহ্বান জানান।
গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে এটি কখনই শুরু হওয়া উচিত ছিল না।