চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদে দ্বন্দ্বের কারণে আসন্ন ইদুল আযহার আগে ইদ উপহারের ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন না দুটি ইউনিয়নের ৮ হাজার পরিবার। অন্যান্য ১২ ইউনিয়নে এবছর চাল বিতরণ করা হলেও সদর উপজেলার গোবরাতলা ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে বরাদ্দ হয়নি ভিজিএফের চাল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাগ-বাঁটোয়ারা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারনে সমাজের অসহায় দরিদ্র খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষরা এই ইদ উপহারের চাল পাচ্ছেনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিজেদের স্বার্থে দুটি ইউনিয়নের ৮ হাজার সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করায় ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত তারা। জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দা, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে রয়েছেন ৮ জন ইউপি সদস্য। ৪ জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপুর পক্ষে থাকলেও বাকি ৮ সদস্যের সাথে ভাগ-বাঁটোয়ারা ও ভিজিএফের অনুপাত কম দেয়া নিয়ে বিরোধ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপুকে কয়েক দফায় তালিকা জমাদানের সুযোগ দেয়া হলেও তা দিতে ব্যর্থ হন তিনি।
অন্যদিকে, চারটি হত্যা মামলার আসামী চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গত ৫ আগস্ট থেকেই পলাতক রয়েছেন। তিনি পলাতক থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ইউপি সদস্যরা তালিকা প্রস্তুত করতে গেলে বাধা দেন চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুর অনুসারী কয়েকজন ইউপি সদস্য। এতে বাধাগ্রস্ত হয়ে এবারও ভিজিএফের চাল বঞ্চিত হয়েছেন চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৩৮০০ পরিবার। এমনকি একই জটিলতায় গত ইদুল ফিতরের ৪০ দিন পরে বিতরণ করা ইদের আগের উপহার ভিজিএফের চাল।
গোবরাতলা ইউনিয়নে বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, শুনেছি এবছর সরকারের বরাদ্দ হওয়া ৪২০০ পরিবার ভিজিএফ পাবে না। ইদের আগে ১০ কেজি চাল হয়ত আমাদের কাছে কিছুই না। কিন্তু সমাজের এমন অনেক মানুষ আছে, যাতে এই চাল পেয়ে ইদের আনন্দ বাড়তো তাদের। অনেক অসহায় দরিদ্র খেটে-খাওয়া মানুষ এই চাল বাজারে বিক্রি করে ইদের অন্যান্য উপকরণ কিনতেন। ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের নিজেদের অর্ন্তদ্বন্দের কারনে তারা এই চাল পেল না।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা তারেক রহমান জানান, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। তারা হয়ত এখন সেটি ভুলে গেছে। তা না হলে নিজেদের দ্বন্দ্বের কারনে এটি করতে পারতেন না। শুনেছি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, কিন্তু ভাগ বেশি বা কম পেলেও নিয়ম অনুযায়ী তারা নিজেরা তো এসব চাল নিতে পারবেন না। ইউনিয়নের মধ্যেই থাকা নাগরিকদের বিতরণ করতে হবে। তাহলে কেন এমনটা করছেন তারা?
গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও ইউপি সদস্য রাফেজ মীর মুঠোফোনে বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারনেই এবার ইদের আগে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করি, তা ইদের পরে বিতরণ করা হবে।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শিল্পী বেগম বলেন, চারটি হত্যা মামলার মধ্যে তিনটিতেই প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু। পলাতক চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারনে বন্ধ আমাদের বেতন-ভাতা। গত সাড়ে তিন বছরে আমাদের এখন পর্যন্ত কোন সভা হয়নি। বেতন-ভাতা আটকে রাখা রয়েছে। তার কারনে জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আমরা কোন কাজ করতে পারছি না। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের জনসাধারণ ভিজিএফের চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এনিয়ে কথা বলতে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও দুজনেরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহিনুর আলম বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। গোবরাতলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দ্বন্দ্বের কারনে তালিকা দিতে পারেনি। অন্যদিকে, চরবাগডাঙ্গায় মামলায় চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সেখানেও ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ফলে ইদের আগে এই দুটি ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় দফায় দফায় তালিকা জমাদানের জন্য সময় ও সুযোগ দেয়া হলেও তারা তা দিতে ব্যর্থ হন। তবে অন্যান্য ১২টি ইউনিয়নে নিয়ম অনুযায়ী সঠিকভাবে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে আসন্ন ইদুল আযহায় প্রায় ৫৪ হাজার ৩০০ পরিবারের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।