আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ। কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপ-এ’র দুই দল ইকুয়েডুর ও স্বাগতিক কাতার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এর মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে মাসব্যাপী বিশ্বকাপের জমাট লড়াই।
এই প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ হিসেবে কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে কাতারের এটি প্রথম অংশগ্রহণ। স্বাগতিক হিসেবে কাতার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
অন্যদিকে আট বছর অনুপস্থিত থাকার পর বিশ্বকাপে ফিরেছে ইকুয়েডর। কাগজে কলমে কাতারের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর। যে কারনে ম্যাচটিতে জয়ের সম্ভাবনায়ও এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা। দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে কঠিন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ইকুয়েডর চতর্থ স্থান লাভ করেছিল। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে বাজিকরদেও কাছে ৭/৫ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর।
কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে কাতারও প্রস্তুত। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এ পর্যন্ত কোন স্বাগতিক দল পরাজিত হয়নি। ইতিহাস এদিক থেকে কিছুটা হলেও কাতারের পক্ষে রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে উদ্বোধনী কোন ম্যাচ গোলশুন্য ভাবে শেষ হয়নি। কাতার এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাচিজত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে চিলির সাথে ২-২ গোলে করার পর একে একে কাতার হারিয়েছে গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানাম ও আলবেনিয়াকে। এসবই কাতারকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে।
গত পাঁচ বছর ধরে স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজ বাসের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক কিছুতেই তাদের মানিয়ে নেয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রুপ-এ’র অপর দুটি দল হচ্ছে সেনেগাল ও নেদারল্যান্ড। কাতারের লক্ষ্য স্বাগতিক হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে যতটা সম্ভব সবাইকে আকৃষ্ট করা, ভাল খেলা উপহার দেয়া।
আফ্রিকান নেশন্সকাপ বিজয়ী সেনেগাল ও ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডকে মোকাবেলা করা বিশ্বও ৫০তম র্যাঙ্কধারী দলটির পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু অক্টোবরের চারটি প্রীতি ম্যাচের জয় কাতারকে দারুন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। শেষ ম্যাচে আলবেনিয়ার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন তারকা স্ট্রাইকার আলমোয়েজ আলি। দেশের হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪২ গোল করেছেন আলি।
২০০২ সালে ওই সময়কার চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে সেনেগাল উদ্বোধনী ম্যাচে অভিষিক্ত দল হিসেবে যে রেকর্ড গড়েছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে চায় কাতার। একইসাথে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় স্বাগতিক হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ডটা স্পর্শ করতে চায়না মেরুনরা। কালকের ম্যাচে জয়ী হতে পারলে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)’র একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে কোন ম্যাচে জয়ে ইতিহাস গড়বে কাতার।
বল মাঠে গড়নোর আগে বিশ্বজুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের নায্য পাওনাসহ অন্যান্য আরো কিছু ইস্যুতে কাতারকে নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। তবে পাশাাশি অবৈধ খেলোয়াড় বাছাইর্বে খেলানোর অভিযোগে ইকুয়েডরও সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই অভিযোগের সত্যতা মিলেনি। এর আগে ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালে তিনবার বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ইকুয়েডর প্রথম থেকেই এগিয়ে যেতে চায়। ১৬ বছর আগে তারা শেষ ১৬’তে গিয়েছিল, বাকি দুটি আসর গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে।
বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচে খেলা পাঁচটি ম্যাচের কোনটিতেই কোন গোল হজম করেনি ইকুয়েডর। শনিবার সর্বশেষ ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে। দুই বছর আগে দলের দায়িত্ব পাওয়া আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাভো আলফারোর অধীনে এভাবেই পুরো ইকুয়েডর বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।
কাতার এর আগে তিনবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলেছে যার মধ্যে একটিতে জয়, একটি ড্র ও একটি পরাজিত হয়েছে। আলবেনিয়ার বিপক্ষে শেষ প্রীতি ম্যাচে এ্যাটাকার আহমেদ আয়েলদিন ইনজুরিতে পড়ে ২৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন। এই একটি ইনজুরি ছাড়া আপাতত কোন ঝুঁকি নেই কাতার শিবিরে। যদিও কাতারের মেডিকেল টিম আশ্বস্ত করেছন আয়েলদিনের ইনজুরি ততটা গুরুতর নয়।