ইবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পার্শ্বস্থ ইবি থানা স্থানান্তর না করার দাবিতে ‘ইবি থানা ইবিতেই থাক’ স্লোগানে সোচ্চার হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা। প্রায় ৪ ঘণ্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে ছাত্রজনতা। দৃশ্যমান সমাধান না হলে আগামী ১৬ তারিখ মহাসড়ক অচল করে দেয়ার ঘোষণা দেন ইবি থানা বাস্তবায়ন কমিটি।
শনিবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ইবি থানা বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রায় হাজার লোকের সমাগম হয় এ সমাবেশে। এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে আশেপাশের দোকানপাট সাময়িক বন্ধ রাখে দোকানিরা।
জানা যায়, শহীদ জিয়ার গড়া ইসলামী বিশ্ববিদালয়কে অস্থিতিশীল করতেই এখানে প্রতিষ্ঠিত দীর্ঘদিনের পুলিশী থানা সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকার। পতনের এক দিন আগে গত ৪ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের আলোকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সন্নিকটে দেখিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরের ঝাউদিয়াতে এ থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের সম্মতি আছে বলেও অবৈধ সরকারের হাতে-গোনা কিছু দোসর নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মন্ত্রণালয়কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেয়।
রক্তক্ষয়ী ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর অবৈধ সরকারের সে আদেশের প্রতিবাদে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। থানা স্থানান্তরের বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রকৃত সত্যের আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছে। সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে বলে জানায় ছাত্র জনতা।
এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তাদের দাবি, সম্প্রতি পতিত সরকারের সুবিধাভোগীরা ঝাউদিয়ায় থানা উদ্বোধনের জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টি করেছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এবং এ অঞ্চলের মানুষ ও গৌরবময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই রাখতে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, দাবি এক দফা এক ইবি থানা ইবিতেই থাক। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র মানব না। এই গৌরবোজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সফলও হয়েছি। আমরা বলতে চাই, ইবি থানা এখানে রাখতে যত আন্দোলন সংগ্রাম করা দরকার তা করে যাব। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সামনের কাতারে থেকে রক্ত দিব। তারপরও ইবি থানা স্থানান্তর করতে দিব না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত রাখতে হলে, ইবি থানাকে তার পূর্বাবস্থায় বহাল রাখার কোনো বিকল্প নেই। স্বভাবতই, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে এবং বিনাইদহ সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এলকাটি দুর্গম এবং নিরাপত্তাজনিত সংকটে রয়েছে। অতএব, ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থান্বেষী মহলের এক তরফা সিদ্ধান্ত বাতিল করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা বহাল রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দাবি, ঝাউদিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে ওখানে আরেকটা থানা, উপজেলা, ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে দিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই থাকবে। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র চলবে না। ইবি থানা ইবিতে রাখার জন্য শিক্ষার্থীরাই যথেষ্ট।
ইবি থানা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুবকর সিদ্দীক বলেন, আমরা চাই বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দ্রুত একটা তদন্ত হোক। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই থানা প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২৬ বছর কাজ করে যাচ্ছে এই থানার অধীনে কিন্তু কেনো যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা স্বার্থান্বেষী মহল স্থানান্তর করার পায়তারা করে যাচ্ছে। আমরা এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত এই থানা স্থানান্তর করতে দিব না। যদি দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট না পায় তাহলে ১৬ তারিখ মহাসড়ক অবরোধ করে দো হবে।
ইবি থানা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হাসান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সাবেক এমপি হানিফকে ঝাউদিয়ার কয়েকজন নেতৃপর্যায়ের লোক ঝাউদিয়া ইবির সন্নিকটে বলে প্রতারণামূলক স্বাক্ষর করায় নেয়। যা মিথ্যা ও তথ্য গোপন রেখে এমন কাজ করেছে। আমরা চাই ইবি থানা ইবিতে থাকুক।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আমরা এলাকাবাসী ও ছাত্র জনতার দাবির কথা শুনেছি। সুবিধা অসুবিধার কথা শুনে তদন্ত রিপোর্ট করা হবে। জন-দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রিপোর্ট প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করা হয়েছে। ওনাদের দাবিও শুনেছি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ১৭ হাজার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। প্রয়োজনে ঝাউদিয়াবাসী সরকারের কাছ থেকে ৪-৫ টা থানা নিয়ে আনলেও আমাদের আপত্তি নাই।