ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে (সাবেক মিল্লাতিয়ান) শ্বাসরোধ করে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মিল্লাতিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৪ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।
এ সময় তাদের তুমি কে আমি কে ,সাজিদ সাজিদ, আমার ভাই মরলো কেনো, প্রশাসন জবাব চাই, আমার ভাই কবরে খুনি কেনো বাহিরে- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে সাজিদের সহপাঠী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, ভাইরাল না হলে বিচার পাওয়া যায় না। আমার ভাই যদি আজকে নিতান্তই একটা সাধারণ শিক্ষার্থী হয় তারপরও সে ন্যায়বিচারের দাবিবার। কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে আমাদের আজকে বলতে বাধ্য হতে হচ্ছে যে আমার ভাই সাজিদ শুধু একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল না। সে ছিল একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। যিনি গত বছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারীতে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন করেছে।
তিনি বলেন, যিনি গত বছর বন্যায় ত্রাণ নিয়ে মাঠে মাঠে এলাকায় এলাকায় দৌড়িয়েছেন। আমার ভাই সাজিদ গণঅভ্যুত্থানে কেন শামিল হয়েছিল? সে যে একটা বৈষম্যহীন নিরাপদ ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই দেশও আমার ভাইকে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে পারেনি। এজন্য আমি রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থার উচ্চ উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আমার ভাইয়ের হত্যার খুনের রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানাচ্ছি।
এখনব্দি কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখায় তিনি ইবি প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাই সরকারি রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপে বিচার বিভাগের তদন্ত কমিটি এই হত্যাকাণ্ড তদন্তের দায়ভার গ্রহণ করুক।রাষ্ট্র যদি আমার ভাই হত্যাকে কেবল একটা লোকাল ভেবে ফেলে রেখে দেয় তবে বলতে হয় এই দেশের কোন শিক্ষার্থী নিরাপদ নয় কোন মানুষই নিরাপদ নয়।
এ সময় ঢাবির মিল্লাতিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ,লাশ পাওয়ার পর তার কপালে ও গলায় দাগ লক্ষ্য করা যায় তারপরও এটাকে আকস্মিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিহত সাজিদ আব্দুল্লাহ একাধারে একজন ভালো মানের খেলোয়াড় একজন, কোরআনের হাফেজ একজন ইসলামী সংগীত শিল্পী এবং একই সাথে ভালো মানের একজন সাঁতারু ও ছিলো বলে দাবি করেন তিনি।
এছাড়াও তিনি বলেন, আমরা এই জুলাই পরবর্তী সময়ে যে প্রশাসনকে প্রত্যাশা করেছিলাম আমরা তাদের নির্লিপ্ততায় আমার এই সন্দেহ হচ্ছে যে প্রশাসন সরাসরি কারো মদদে খুনের সাথে জড়িত আছে কিনা! আমরা একই সাথে তাদের এই ধরনের নির্লিপ্ততা এভাবে চুপসে যাওয়ার হলের ঘটনা দেখে আবরার ফাহাদের কথা স্মরণ হচ্ছে শহীদ আবরার ফাহাদকে সারারাত পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে আমরা জানিনা সাজিদ কে কি ধরনের নির্যাতন করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে ।
তারা অভিযোগ করেন ,তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই রাত ৩টায় তাকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লাশ পাওয়া যায় ১৭ জুলাই বিকাল ৬টায়। অথচ লাশ পাওয়ার পর প্রশাসনের নিরব ভূমিকা এবং গলায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও ঘটনাটি দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে।
এছাড়াও মানববন্ধনে ছয়টি দাবি জানান তারা। তা হলো-
১. পিবিআই/সিআইডি/বিচার বিভাগীয় কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
২. হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির তদন্ত করে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
৪. সাজিদের পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা দিতে হবে।
৫.বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আলোর ব্যবস্হা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. আন্দোলনকারীদের হয়রানি বন্ধ ও সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর রক্ষা করতে হবে।