ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি সেনাদের মুক্ত করা প্রসঙ্গে তাঁদের স্বজনদের এ কথা জানান নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র সামরিক চাপই তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত করবে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল ও খান ইউনিস জয় করেছি। এবার দক্ষিণের রাফায় স্থল অভিযান শুরু হচ্ছে।’
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) অভিযোগ করেছে, গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে সেখানে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ইসরায়েল। পাশাপাশি দুটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত।
এর মধ্যে আইনগতভাবে মানা বাধ্যতামূলক এমন এক নির্দেশে আইসিজে ইসরায়েলকে কোনো বিলম্ব ছাড়াই গাজায় খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহসহ মৌলিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার অবাধে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন।
এক নির্দেশে আইসিজে ইসরায়েলকে কোনো বিলম্ব ছাড়াই গাজায় খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহসহ মৌলিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার অবাধে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন।
গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ব্যাপক ‘হত্যাযজ্ঞ’ ঘটাতে পারে বলে গত মাসে সতর্ক করে দেন জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস।
তবে হামাসের বন্দুকধারীরা রাফায় লুকিয়ে আছেন উল্লেখ করে তাঁদের পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
এক বিবৃতিতে মার্টিন গ্রিফিথস বলেছিলেন, রাফায় ১০ লাখের বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাঁরা সবাই মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে আছেন। শহরটির বাসিন্দাদের কাছে খুব অল্প পরিমাণ খাবার আছে। তাঁদের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও সীমিত। তাঁদের যাওয়ার কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথসকে এমন কড়া ভাষায় বিবৃতি দিতে সচরাচর দেখা যায় না।
গাজা ছোট শহর, রাফা মিসরের সীমানালাগোয়া। গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংঘাত শুরুর আগে রাফায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করতেন। তবে সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিলে রাফায় মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখে পৌঁছায়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। এ হামলায় ইসরায়েলি ভাষ্য অনুযায়ী ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছেন তাঁরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ওই দিন থেকেই এ উপত্যকায় শুরু করা ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৫৫২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।