গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। হামাসের রকেট হামলার পর থেকে কার্যত নতুন মাত্রা নেয় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। এই সংঘাতে দুই পক্ষে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৩০০ জন। এর মধ্যে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১২০০ এবং ফিলিস্তিনে ১১০০। খাদ্য,পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় ও ইসরাইলের নির্বিচারে হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত পঞ্চম দিন পর্যন্ত ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। এ যেন মৃত্যু আর আতঙ্কের উপত্যকা। আকাশে যুদ্ধবিমানের বিকট শব্দ। চারদিকে বিধ্বস্ত ভবনের ইট-পাথর।
আইডিএফ এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, গত চার দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ২০০ জন এবং আহত হয়েছেন ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ।
আর এই সময়সীমায় গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১০০ জন মানুষ এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৯ জন।
জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। আপাতত জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে সেটিও বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় জাতিসংঘের অন্তত ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনাদের হামলায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্তত ৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৯ জন।
এদিকে বিরোধী নেতা বেনি গানৎসকে নিয়ে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাস সেখানকার একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এতে কেউ হতাহত হয়নি। তারা বলছেন, ১২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস কয়েক বছরের মধ্যে ইসরাইলের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। ইসরাইলের ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি রকেট হামলা করে সংগঠনটি। এ রকেট হামলার ৫ ঘণ্টা পর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার ইসরায়েল-গাজার সীমান্তের একটি সেনা ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ত । সেখানে তিনি বলেন, ‘হামাস একটি পরিবর্তন চেয়েছিল এবং তা তারা পাবে। গাজা আর আগের মতো থাকবে না।’
‘আমরা আপাতত বিমানবাহিনী দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছি, এই পর্ব শেষ হলে আমাদের স্থলবাহিনী গাজায় প্রবেশ করবে।’
ইসরাইল-হামাসের চলমান যুদ্ধে গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে সংকট বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনি রেফিউজি ইন দ্য নেয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে আগে থেকেই প্রায় আড়াই লাখ শরণার্থী ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিনে এই শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন আরও আড়াই লাখেরও বেশি শরণার্থী। নতুন যোগ হওয়া এই অতিরক্ত শরণার্থীদের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সুরক্ষার জন্য আমরা এই অর্থ চাইছি।’
অবিলম্বে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বুধবার বলেছেন, ‘গাজায় অবশ্যই খাবার, পানি, জ্বালানিসহ জরুরি জীবনরক্ষাকারী পণ্য যেতে দিতে হবে। আমাদের এখন দ্রুত ও নির্বিঘ্ন মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ পেতে হবে।’