বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দদ্বয় পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৩ মার্চ) ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইসরাইল নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি তুলে বক্তারা বলেন, বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশের পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মালয়েশিয়া, লিবিয়া ও পাকিস্তান তাদের পাসপোর্টে ইসরাইলের নাম উল্লেখ করে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে লিবিয়া তাদের পাসপোর্টে ‘ইসরাইল’ শব্দের পরিবর্তে ‘দখলকৃত ফিলিস্তিন’ উল্লেখ করে।
বক্তারা আরও বলেন, একসময় বাংলাদেশি পাসপোর্টেও লেখা থাকত— “দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল।” কিন্তু ২০২১ সালে তৎকালীন সরকার ই-পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটি বাদ দিয়ে “ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ” লেখা সংযোজন করে।
বক্তাদের অভিযোগ, ওই সিদ্ধান্তের পর দখলদার ইসরাইল সরকার উল্লাস প্রকাশ করে এবং তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একে বাংলাদেশ-ইসরাইল কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখায়।
বক্তারা দাবি করেন, পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক মানের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ২০২৫ সালের গ্লোবাল পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ার পাসপোর্টের অবস্থান সপ্তম স্থানে, আর বাংলাদেশ ৮৮তম স্থানে রয়েছে।
তাঁরা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানের দোহাই দিয়ে এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা ট্রেডিং ইকোনোমিকসের তথ্যে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের আমদানি-রফতানি চলছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তারা দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ বন্ধের দাবি জানান।
গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, অথচ বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইল নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, বাংলাদেশের উচিত ফিলিস্তিনের গাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপন করা, যাতে মানবিক সহায়তা পাঠানো সহজ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশে কার্যকর থাকা সব প্রো-ইসরাইলি কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কেনা ইসরাইলি নজরদারি প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।
এসময় বক্তারা ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করা বাংলাদেশি বৈমানিক সাইফুল আজমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ছবি ও বিমানের প্রতিকৃতি পাসপোর্টের জলছাপে সংযোজনের দাবি জানান।
আয়োজিত সমাবেশে ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ রিফাতুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আমজনতার দলের সভাপতি মুহাম্মদ তারেক রহমান, সিয়ান পাবলিকেশনের কর্ণধার আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক, ইনকিলাব মঞ্চের সভাপতি শরীফ ওসমান হাদী, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।