দেশীয় চলচ্চিত্রের অঙ্গণে এখন নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এই ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয়টি সিনেমার মধ্যে সাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ই সব প্রেক্ষাগৃহে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
আয়েও রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। অন্য সিনেমায় যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি শো নিয়ে এগিয়ে চলেছে। সেখানে মাল্টিপ্লেক্সে ২৮টি শো দিয়ে যাত্রা শুরু করে তাণ্ডব, এখন সিনেমাটির প্রদর্শনীর সংখ্যা ৪৫। এ ছাড়া শতাধিক সিঙ্গেল স্ক্রিনে মুক্তি পায় ‘তাণ্ডব’।
সিনেমাটির আয়ে উচ্ছ্বাস ফুটে উঠে প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের কন্ঠে, তাই জানান, ‘আমরা প্রথম পাঁচ দিনের হিসাব পেয়েছি। সেখানে আমাদের গ্রস সেল পাঁচ কোটির বেশি। এই আয় আরও বাড়বে। মাঝখানে কিছুটা দর্শক কমলেও এখন আবার আগের মতো দর্শক দেখছেন।’
সিনেমার প্রযোজনা–সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, সিনেমাটির পরবর্তী পাঁচ দিনের আয় আরও চার কোটি টাকার বেশি।
‘তাণ্ডব’ ছাড়াও আরও পাঁচটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে ছুটির দিনগুলিতে। একে একে সেইসব সিনেমার আদ্যোপান্ত দেখে নেওয়া যাক–
‘টগর’
প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে দাপট দেখাতে পারেনি ‘টগর’। কিছুটা বিষাদ হয়তো তাই ফুটে উঠে সিনেমাটির পরিবেশক এবং অভি কথাচিত্রের কর্ণধার জাহিদ হাসানের কথায়, তার ভাষ্য, ‘আয় কত হলো, এটাকে আমরা ফোকাস করতে চাই না। কারণ, ঈদে ‘তাণ্ডব’ই সবচেয়ে বেশি আয় করছে। তার ধারেকাছেও অন্য সিনেমা নেই। তার মানে এই নয়, অন্য সিনেমা ভালো নয়।
‘উৎসব’
শুরুতে মাল্টিপ্লেক্সে ৯টি প্রদর্শনী পেয়েছিল ‘উৎসব’। পরিচালক তানিম নূর সিনেমাটি মুক্তির আগের দিন জানিয়েছিলেন, দর্শক পছন্দ করলে তাঁদের সিনেমার হল বাড়বে। সেটাই হয়েছে। আয়েও এগিয়ে রয়েছে ‘উৎসব’। এখন ছবিটির ১৫টি শো চলছে।
পরিচালক তানিম বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি মাল্টিপ্লেক্সে কয়েকটি শো নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সেখান থেকে দর্শক সিনেমাটি গ্রহণ করেছে। পরে হলসংখ্যা অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সিনেমাটি দর্শকদের দেখাতে চাই।’
তিনি জানান, গত ৯ দিনে ‘উৎসব’ আয় করেছে এক কোটির বেশি টাকা। এ হিসাব গত সোমবার পর্যন্ত। এ আয়ের সঙ্গে গত দুই দিনে যোগ হবে আরও ২০ লাখ টাকার বেশি।
‘ইনসাফ’
ঈদে হলসংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ‘ইনসাফ’। সিনেমাটির ব্যবসায়িক সফলতায় খুশি প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তবে তাণ্ডব সিনেমার কারণে তাঁরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন বলে জানালেন।
খসরু বলেন, ‘আমাদের সিনেমা সামনে আরও ভালো চলবে। কারণ, বিভিন্ন হল থেকে তাণ্ডব নেমে গেলে আমরাই নতুন হিসেবে ঢুকব। সেভাবেই হলমালিকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’
সব মিলিয়ে সিনেমায় আয় কত—এমন প্রশ্নে এই প্রযোজক বলেন, ‘যেটা প্রকাশ্যে এসেছে, সেটা শুধু সিনেপ্লেক্সের। সব মিলিয়ে আয় কোটি তো পার হবেই।’
‘নীলচক্র’
ঈদের আগে পরিচালকের মনে আশা জাগিয়েও পরে পিছিয়ে পড়ে ‘নীলচক্র’। সিনেমাটির শোর সংখ্যা কমে যায়। কমতে থাকে আয়।
পরিচালক মিঠু খান বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা আছে ঢাকার বাইরে বড় পরিসরে মুক্তি দেওয়ার। আশা করছি, সেখানে আরও দর্শক পাব। জুলাই থেকে দেশের বাইরে বড় পরিসরে মুক্তি পাবে। সেখান থেকেও ভালো আয় হবে।’
পরিচালক না বললেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সিনেমাটি মাল্টিপ্লেক্স থেকে আয় করেছে ২৩ লাখ টাকার মতো।
‘এশা মার্ডার: কর্মফল’
অল্পসংখ্যক হল নিয়ে আলোচনায় রয়েছে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। মুক্তির পর থেকে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ বাড়ছে।
ক্রমান্বয়ে হল ও দর্শকসংখ্যা বাড়ছে বলেই জানান সিনেমার পরিচালক সানী সানোয়ার। তার মতে, অল্পসংখ্যক শো হলেও বেশির ভাগই ছিল হাউসফুল। সেটা তাঁদের প্রত্যাশিত আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের ছবিটি মিডিয়াম বাজেটের। আমরা আয় যেমন করছি, তেমনি দর্শকদের কাছ থেকে ভালো প্রশংসা পাচ্ছি। এটা কিন্তু আমাদের অর্জন। সিনেমাটিতে নিম্নবিত্ত মানুষের গল্প বলা হয়েছে। সেটা বহু দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরেও আমাদের সিনেমা মুক্তি পাবে। আয়েও আমরা ভালো অবস্থানে থাকব। তবে একটু সময় লাগবে।’
মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিনেমাটির আয় ১৬ লাখের মতো। ইতিমধ্যে সিনেমার স্বত্বও চড়া দামে বিক্রি হয়েছে।
ছুটির দিনগুলিতে সিনেমাপ্রেমিরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমান। ঈদে তাই মুক্তি পাওয়া ৬ টি চলচ্চিত্রই পেয়েছে দর্শক। দিনে দিনে ঢালিউড অঙ্গণও তাই উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে বিশ্বাস দর্শকদের।