বাংলাদেশে ঈদের আনন্দে এক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে ধর্ম, জাতি, আর্থিক বা সামাজিক বৈষম্য সব ভুলে সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়েছেন। পুরো দেশব্যাপী ঈদের উদযাপন একত্রিত করেছে হাজার হাজার মানুষ, যেখানে দেখা গেছে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং একতার এক অনন্য ছবি। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন জমিদার, কৃষক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী সবাই ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে মানুষের অনুভূতিতে ছিল পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও স্রষ্টার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
৩১ মার্চ সোমবার, সকাল সাতটায় রাজধানী ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ঈদ জামাত। জামাতটি যথাযথভাবে একঘণ্টার বিরতির পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫টি পরপর জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণ ছিল পূর্ণ, যেখানে সবাই একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানেও সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল ঈদের জামাত, কিন্তু মুসল্লিরা ভোর থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেন। জামাতে অংশ নেওয়ার জন্য তারা সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে মাঠে প্রবেশ করেন। নামাজ শেষে তারা দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন এবং একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এছাড়া, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো ঈদ জামায়াতের আয়োজন করেছিল, যা ছিল এক বিশাল মহড়া। ঈদ মাঠটি পূর্ণ ছিল মুসল্লিদের উপস্থিতিতে, এবং নামাজ শেষে তারা একে অপরকে কোলাকুলি করে ভালোবাসা বিনিময় করেন। এর পর, রাজনৈতিক নেতা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জামাতে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জামাতে অংশ নেওয়ার পর তার বক্তব্যে বলেন, “ঈদ মানেই একতার শক্তি। যতই বাধা আসুক, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।” এছাড়া, তিনি জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ করে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। মোনাজাতে তিনি দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করেন, এবং পরে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে, যেমন দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সুশৃঙ্খলভাবে ঈদ জামাত আয়োজন করা হয়, যেখানে মুসল্লিরা দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন।
এদিকে, রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে শুরু হয় এক বিশাল ঈদ আনন্দ মিছিল। শামিল হন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুঘল এবং সুলতানি আমলের ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য মিছিলে পাপেট শো অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সম্প্রীতি এবং সচেতনতামূলক বার্তা প্রদর্শন করা হয়। এই আনন্দ শোভাযাত্রাটি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ঘুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শেষ হয়।
ঈদুল ফিতরের এই উৎসব শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য, ভালোবাসা, এবং সহমর্মিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।