ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষ না করেই সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন। রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবননান্দ দাশ কনফারেন্স হল রুমে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটেছে৷
জানা যায়, ববি উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবের চেতনার বিরোধীতা, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী বিতর্কিত ঢাবি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্থবিরতা, নবনিযুক্ত বিতর্কিত ট্রেজাররের অফিস সহায়ক ও ড্রাইভারদের গভীর রাতে নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির বাস্তবায়ন না হওয়াসহ প্রায় ২০ টি অভিযোগ এনে পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে চারদিন যাবৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ববি শিক্ষার্থীরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, রোববার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য আলোচনায় বসার কথা বললেও রবিবার বেলা ১০টা ৪০ পর্যন্ত কখন এবং কোথায় আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হবে সেটা জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে ১০টা ৪২ রেজিস্টার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য বেলা ১১ টায় সাক্ষাৎকারের বিষয়ে নোটিশ জারি করেন৷ শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হতে রাজি না হলে জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ দীর্ঘ আলোচনায় উপাচার্যের বিভিন্ন প্রশ্নের যুক্তিখণ্ডন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সমালোচনার পাশাপাশি পদত্যাগ দাবি করেন৷ এসময় শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ উপাচার্যকে পদে বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেয়। এসময় সভাকক্ষ জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।
সভায় অংশ নেওয়া মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, সভায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করার কারণে সভা শেষ না করেই উপাচার্য চলে যান। তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, সবগুলো উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাননি। আর প্রত্যকটা উত্তর সন্তোষজনক ছিল এমনও না।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আশরাফুল মোল্ল্যা বলেন, আজকের সভায় ভিসি ম্যামের কাছে তার বিরুদ্ধে আমাদের যেসকল অভিযোগ আছে সেগুলো তুলে ধরি। কিন্তু তিনি তার সঠিক জবাব দিতে পারেনি, তার কোনো বক্তব্যে আমরা শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না। সভা চলাকালীন এক পর্যায়ে তিনি সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। তার হঠাৎ সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যাওয়ায় আমরা বিস্মিত!
উপাচার্যের পদত্যাগ যৌক্তিক মনে না করা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা উপাচার্যের পক্ষে ব্যাপারটা এমন না। পদত্যাগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা করছে আমরা সেটার বিপক্ষে রয়েছি। আমরা চাচ্ছি ভিসির ‘পদত্যাগ-পদত্যাগের’ যে বিষয়টা, সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যানকর কোনো বিষয় না, বরঞ্চ ক্ষতির দিক। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনমূলক উন্নয়ন হোক, সিস্টেমে পরিবর্তন আসুক।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই-তিন গ্রুপে বিভাজনের জন্য আলোচনা শেষ করতে পারিনি৷ সেজন্য সকল বিভাগ বিভাগে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একেকদিন একেক বিভাগে আলাদাভাবে বসবো৷ শৃঙ্খলা ছাড়া আলোচনার উপায় নাই৷
এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।