প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আগামীকাল (২৭ জুলাই) ‘বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালে আমরা গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি বিশ্ব মহামারি ও যুদ্ধসৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে কিভাবে একটি দেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। এই বৈশ্বিক সংকটকালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের স্বপ্ন, সাহস ও সক্ষমতার অনবদ্য স্মারক।’
তিনি বলেন, ‘এবছরই মেট্রোরেল ও কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল চালু করা হবে। কেউ যাতে ভূমিহীন-গৃহহীন না থাকে সেজন্য আমরা গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, কোভিডকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৯৪ শতাংশ। আমাদের জিডিপির আকার ৩৯ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। আমরা এখন দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪শে জুন এক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। টিকাটুলি কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাকালে প্রয়াত জননেতা জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগের সকল সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শৃঙ্খলা রক্ষা ও সাংগঠনিক সেবায় ধারাবাহিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৬ দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে উত্তাল রাজপথে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা দিনগুলোতে যুদ্ধের রসদ সরবরাহের দু:সাহসী ভূমিকা পালন করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামেও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নানা অবদান আছে। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ঐতিহ্যবাহী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে পুনর্গঠিত করার উদ্দেশ্যে একটি আহবায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যাত্রা শুরু হয়।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০০৩ সালে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক কাঠামো করার পর সেবা-শান্তি-প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠনটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় দেশ ও জাতির সকল দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নি:স্বার্থ স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারিতে গোটা বিশ্ব যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে, সেই চরম দু:সময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সচেতনতা সৃষ্টি, ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা থেকে টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও লাশ দাফনসহ সকল প্রকার মানবিক উদ্যোগ গ্রহণে যেভাবে দিন-রাত নি:স্বার্থভাবে কাজ করেছে তা অত্যন্ত প্রশংনীয়।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আরো গতিশীল হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত-আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির সকল নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভার্থীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।
এছাড়াও তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহসহ যে সকল নেতা-কর্মী বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।