অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে পুরো দেশজুড়ে চলছে আলোচনা।
বুধবার (১৪ মে) রাত ১০টার দিকে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। এমন সময় তাকে লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল নিক্ষেপ করা হলে সেটি গিয়ে উপদেষ্টার মাথায় আঘাত করে।
জানা যায়, বোতল নিক্ষেপকারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ভিডিও দেখে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বোতল নিক্ষেপকারী ওই যুবকের নাম ইশতিয়াক হোসেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
এদিকে বোতল নিক্ষেপের ঘটনার পর রাতেই ওই শিক্ষার্থীর পরিচয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
‘জবিয়ান্স’ নামের একটি পেজের পোস্টে উল্লেখ করা হয়, বোতল নিক্ষেপকারীর নাম ইশতিয়াক হোসাইন। ডিপার্টমেন্ট অর্থনীতি, ব্যাচ ১৯।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. তাজাম্মুল বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের। আমাদের এখন মূল কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিদাওয়া আদায়। ওই শিক্ষার্থীর এসব বিষয়ে এখন মাথা ঘামানোর সময় নেই।’
আমাদের দাবি আদায় হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ওই শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এ নিয়ে হুসাইন বলেন, ‘গতকালের ঘটনার পর সারাদেশে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগ হিসেবে। অথচ পরিবারের আর্থিক সংকটে থাকায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সাব-কন্ট্রাকটর হিসেবে জুলাইয়ের দিকে মাতুয়াইলে একটা ইন্সট্রাকশনে কাজ করার জন্য যোগ দেই। সেখানেই আমি কাজ করি।’
নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনেও কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি ইন্টারে ছাত্রলীগ ছিলাম তাহলে আপনারা আমাকে যে শাস্তি দিবেন আমরা মেনে নিব। কেউ একগুচ্ছ প্রমাণ দেক শুধু। আমার সাথে যারা ইন্টারে পড়েছে তাদের কে জিজ্ঞেস করুন আমাকে কখনো কারো প্রতি ক্ষোভ ছিল এটাও প্রমাণ করতে পারবে না।’
জুলাই বিপ্লবে নিজের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জুলাইয়ে মাতুয়াইলে জুলাই আন্দোলনে যোগ দেই। এমনকি আমি সেখানে পুলিশের হাতে ধরাও খেয়ে যায়। আমি মোবাইল রেখে দেয় পুলিশ। পরে সব ডিলিট করে আমার ফোন ফেরত দেওয়া হয়।’
গতকালের ঘটনার প্রসঙ্গে হুসাইন বলেন, ‘জবির আন্দোলনে আমার হাতের আঙ্গুল ভেঙে যায়। আমি তাও ব্যাথা নিয়ে সেখানে ছিলাম। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ভাই যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন আমি সবাই ভুয়া ভুয়া বলতেছে সে excitement এ নিচে দেখলাম একটা প্লাস্টিক বোতল পড়ে ছিল একটু পানিসহ এটা আমি উপরের গাছের দিকে থ্রো করি। কিন্তু আমি জীবনেও ভাবিনি এটা উপদেষ্টার মাথায় পড়বে। আমার জীবনে এটা সবচেয়ে অবাক করা কান্ড হয়েছে। আমি যা লক্ষ্য করি সেখানে এ বোতল কিভাবে ঠিক সেখানেই গিয়েছে এতে অন্যদের চেয়ে আমি বেশী অবাক।
শেষে তিনি জানান, তাও অনিচ্ছায় হলেও এটা সেখানে চলে গেছে। দোষ করার মানসিকতায় না থেকেও এটা যেহেতু হয়ে গিয়েছে সেহেতু আমি তার কাছে দু:খ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।