ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর ভর করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিস্তৃত সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দুই দেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদি একমত হয়েছি।’
মঙ্গলবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের সরকারপ্রধানই সহযোগিতা আর সমঝোতার ভিত্তিতে সমৃদ্ধশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় জানান। দুপুরে হায়দরাবাদ হাউজে প্রথমে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
জানা যায়, দুই নেতার বৈঠকে বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় দুই দেশ অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করেছে।
ভারত প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি সঞ্চার করার ক্ষেত্রে মোদি জির দূরদর্শী নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী ভারত। প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক রোল মডেল।’
তিনি বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি, যার ফল আমাদের দুদেশের জনগণের উপকার বয়ে আনবে। নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।’
মোদি বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান তারা।
বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে ভারত সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে।গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা বিস্তৃত করেছি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করছি এবং আমরা আলোচনা করে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে শক্তি আমাদের শত্রু, তাদের যেন আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।’
বৈঠকের আলোচ্যসূচী প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করার আলোচনা আমরা করেছি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার বিষয়েও আলোচনা চলমান আছে।’