কিশোরগঞ্জের পরিচিত গোরখোদক মনু মিয়া, যিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর—তিনিই এখন শয্যাশায়ী। ডায়াবেটিস ও কোমর ব্যথায় ভুগে তিনি ভর্তি আছেন হাসপাতালে। এর মধ্যেই তাকে আরও ব্যথিত করেছে একটি বেদনাদায়ক খবর—তার বহুদিনের সঙ্গী, প্রিয় ঘোড়াটি কে বা কারা মেরে ফেলেছে।
এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে মানুষের সহানুভূতি জড়ো হয় মনু মিয়ার পাশে। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাশারও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি হাসপাতালে ছুটে যান তার সঙ্গে দেখা করতে।
দুজনের এই সাক্ষাৎ হয় এক আবেগঘন পরিবেশে। অভিনেতা বাশার জানিয়েছেন, মনু মিয়ার জীবনবোধ, পশুর প্রতি ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগে তিনি মুগ্ধ। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে বাশার লেখেন,মনু চাচা ঘোড়ার মৃত্যুতে কষ্ট পেলেও, তার প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি বিশ্বাস করেন, ঘোড়ার রিজিক এতটুকুই ছিল। আল্লাহ যতটুকু সময় নির্ধারণ করেছিলেন, সে ততটুকুই বেঁচে ছিল।
ঘোড়ার জন্য কেনা খড়-কুড়ার প্রসঙ্গ উঠলে মনু মিয়া জানান, ১০ মণ খড় আর ১০ মণ কুড়া কিনে রেখেছিলাম। এখন সেগুলো বাড়িতে পড়ে থাকবে। ওর রিজিকে ছিল না, চলে গেল। সেই খড়-কুড়া দেখলেই মন খারাপ হবে।
অভিনেতা বাশার আরও বলেন, মনু চাচার মতো মানুষরা কারো থেকে এক টাকাও নেন না। কবর খোঁড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এত বছর ধরে করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। এমন আত্মত্যাগী মানুষদের সমাজে কদর খুব কম। অথচ তারাই আমাদের আসল নায়ক।
বাশার পোস্টের এক জায়গায় লেখেন,মানুষের শখ বাইক বা গাড়ি, আর মনু চাচার শখ ছিল ঘোড়ায় চড়ে মানুষের দরজায় পৌঁছানো, প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো।
মনু মিয়া সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরতে চান। তবে তিনি কারও কাছে ঘোড়া চান না, চান শুধু দোয়া। এই মানবিক মানুষটির জীবনের গল্প আমাদের শেখায় নিঃস্বার্থতা, দায়িত্ববোধ আর প্রকৃত শ্রদ্ধা কাকে বলে।
অভিনেতা বাশার লেখেন,মনু মিয়ার ঘোড়া হয়তো বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তার জীবন দিয়ে আমাদের শেখালো এক সত্যিকারের নায়কের পরিচয়।