পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতজন আহত হয়েছেন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরিফুর রহমান সংঘর্ষের সময় গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
এর আগে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের বার্ষিক জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। এ সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এছাড়া যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমার নামাজের পর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে কাদিয়ানিদের জলসা বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ তাতে বাধা দিলে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এতে পুলিশসহ দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। এ সময় কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের অনুসারীদের দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড রাবাব বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, স্থানীয় আহমদিয়া সম্প্রদায় (কাদিয়ানি) শুক্র, শনি ও রোববার সালানা জলসার আয়োজন করে। এই জলসা বন্ধ ঘোষণার দাবিতে আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের হাজারও লোক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো বাঁশ ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
ইসলামি দলের নেতারা জানান, কাদিয়ানিরা মুসলিম নয়। তারা মুসলিম নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, কাদিয়ানিরা অমুসলিম হিসেবে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো এই দেশে বাস করুক, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এর আগে ২০১৯ সালেও পঞ্চগড়ে জলসা করতে চেয়েছিল আহমদিয়া সম্প্রদায়। তবে তখন হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির আল্লামা আহমদ শফীর কঠোর হুঁশিয়ারির কারণে শেষ পর্যন্ত সেই জলসা স্থগিত করা হয়।