গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার রাজনীতিতে এক নতুন মোড় নিয়েছে। জেলার চারটি আসনেই এখন নির্বাচনী উত্তাপ স্পষ্ট। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নেমে প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়া ছিল বিএনপির ঘাঁটি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাসদ জেলার চারটি আসনই দখলে নেয় এবং টানা ১৬ বছর ক্ষমতা ধরে রাখে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি সর্বশক্তি নিয়েই ফিরতে চাইছে এবং হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে জামায়াতও সব আসনে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর):
একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হলেও ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এবার আবারও হারানো ঘাঁটি ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি।
আসনটিতে একাধিক বিএনপির প্রার্থী সক্রিয় আছেন মাঠে। যাদের মধ্যে রয়েছে দলটির সাবেক এমপি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা ও উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলতাফ হোসেন।
অন্যদিকে জামায়াতও আছেন বেশ তৎপর, ইতিমধ্যে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশি মাওলানা বেলাল উদ্দিনও নিয়মিত চালাচ্ছেন জনসংযোগ। এছাড়া আরো আছেন এনসিপির নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর):
এই আসনটিতে চারবার জয়ী হয়েছে বিএনপি, এছাড়া একবার জামায়াত ও একবার জাতীয় পার্টি।
সাম্প্রতিক সময়ে আসনটি ছিল জাসদের দখলে। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিএনপি-জামায়াত আবারও প্রভাব বিস্তার করেতে শুরু করেছে। যদিও আসনটিতেও বিএনপির রয়েছে একাধিক প্রার্থী। তারা হলেন, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ফরিদা ইয়াসমিন।
অন্যদিকে জামায়াতের আছে মাত্র একজন আব্দুল গফুর। এছাড়া আরো আছেন জাতীয় পার্টির আহসান হাবীব লিংকন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর):
২০০৮ থেকে মাহবুবউল আলম হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাতে ছিল এই আসন। তবে আসন্ন নির্বাচনে এবার বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন ও লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ।
আর ইতিমধ্যেই আসনটিতে জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুফতি আমীর হামজা।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা):
দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর আগের সময়ে এটি বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। তবে আসন্ন নির্বাচনে এখানেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী।
যাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমী, শিল্পপতি শেখ সাদী, কৃষকদলের হাফেজ মইনুদ্দিন সাহেব। অন্যদিকে জামায়াত থেকে প্রার্থী হচ্ছেন মো. আবজাল হোসেন।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জেলার চার আসনেই বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ বিভাজন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে, ততই কোন্দলের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
অন্যদিকে জামায়াত বিগত সরকারের ব্যর্থতা সামনে এনে নতুন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ফলে কুষ্টিয়ার মাঠে বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় রাজনীতিকে ফের সরগরম করে তুলেছে।