মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান, উঠে আসছে যেসব তথ্য

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

ব্যাংক ও অস্ত্র লুটকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এর পাশাপাশি গতকাল শুক্রবার থেকে ব্যাংক ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।

সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করছে। কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মত সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেএনএফের হামলার ঘটনা কিন্তু ছোট কোন ঘটনা নয়। সূদরপ্রসারী হামলার লক্ষ্য হিসাবে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। কেএনএফ বম সম্প্রদায়ভুক্ত। একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। এদের সদস্য সংখ্যা খুবই কম।

এর আগে র‍্যাব ও যৌথ বাহিনী অভিযানে চালিয়ে তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়। তারা পাশের দেশে পালিয়ে যায়।

বিশ্লেষকরা আরও বলেন, শান্তি আলোচনার নামে এই কেএনএফের সদস্যরা পাহাড়ে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে। অর্থ আদায়ের এই পরিকল্পনায় শান্তি কমিটির একাধিক সদস্য রয়েছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। আগেই এই কেএনএফকে নির্মূল করার দরকার ছিলো। কিন্তু তা করা হয়নি। এই কেএনএফের সঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরামসহ কয়েকটি রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে। এরা বান্দরবানের দুর্গম এলাকা দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

এই হামলার ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আজ শনিবার বান্দরবান যাবেন। তার সফরসঙ্গী হবেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের আইজি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বান্দরবানের রুমা ও থানচি এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।

আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নির্মূলে যৌথ বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা তত্পরতা অব্যাহত থাকবে। টার্গেট পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মাথাচারা দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।

এদিকে হামরা ঘটনায় শান্তি কমিটির ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শান্তি কমিটির অযোগ্যতার কারণেই এই হামলার ঘটনা। আলোচনার নামে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে পাহাড়ে। কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা যায়নি কখনো। তাদেরকে নির্মূল করতে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে হবে। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর গুলি করে অন্যদিকে আলোচনার কথা বলে সমাধান পাওয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে পাহাড়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। পাহাড়িদের একটি গোষ্ঠী সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে দেশ-বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে এসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরা মাথাচাড়া দিয়ে যাতে উঠতে না পারে সেজন্য সেনাবাহিনীর ক্যাম্পগুলো পুনর্বহাল করতে হবে। এছাড়া শান্তি চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ এসেছে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়িরা সুযোগ-সুবিধা পাবে, আর বাঙালিরা পাহাড়ে অবহেলিত থাকবে এটা কোনভাবেই হতে পারে না। সংবিধানের সকলের জন্য সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার ফোরামের সভাপতি মইনুদ্দিনও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, পাহাড়ে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই কুকি চিনকে শান্তি আলোচনার নামে পাত্তা দেওয়া ঠিক হয় নাই। শান্তি আলোচনার নামে তারা এই হামলা করার সুযোগ নিয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোন সুযোগ নাই। এই ঘটনায় পার্বত্য এলাকায় ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে পর্যটনসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামবে। ২০২২ সালে কুকি চিনের আস্তানা নজরে আসে। এরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের আস্তানা ধ্বংস করে দেয়। এদের বিরুদ্ধে ওই সময়ে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার দরকার ছিলো।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসার সুযোগ নাই। এই আলোচনার সুযোগে তারা পার্শ্ববর্তী দুটি দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। শান্তির নামে তারা পাহাড়ে অর্থ সংগ্রহে নেমেছে। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দমন করতে হবে। নইলে এ ধরনের অনেক ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্ম হবে। তারা একইভাবে সরকারকে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করবে।

১৯৯৭ সালে একবারই শান্তি চুক্তি হয়েছে। এরপর পাহাড়ে আর কোন শান্তি আলোচনা চলতে পারে না। ব্যাংক লুটের সময় সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। অথচ ওই সময় এদের দমনে পাল্টা গুলি চালানো দরকার ছিলো। এই দেশ থেকে এদের বিতাড়িত করতেই হবে।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

তারেক রহমানের নাম উচ্চরণের আগে অজু করতে বললেন, বিএনপি নেতা বুলু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেছেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে কয়েকজন অর্বাচীন কিছু কথাবার্তা বলেছেন। তারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যদি নেতা হন,...

নাহিদ রানাকে প্রশংসায় ভাসালেন কিউই তারকা রাচিন রবীন্দ্র

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা নাহিদ রানা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা এখনও অনেকটাই নতুন, তবে তার গতিময় বোলিংয়ের মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের অবস্থান জানান...

সেই রাতে কিভাবে হামলার শিকার হন, জানালেন অভিনেতা আজাদ

সাভারের আশুলিয়ায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেনছোট পর্দার অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই রাতের...

সরকারে থাকার চেয়ে এখন রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন: নাহিদ ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সরকারে থাকার চেয়ে এখন রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন...

সম্পর্কিত নিউজ

তারেক রহমানের নাম উচ্চরণের আগে অজু করতে বললেন, বিএনপি নেতা বুলু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেছেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে কয়েকজন অর্বাচীন কিছু...

নাহিদ রানাকে প্রশংসায় ভাসালেন কিউই তারকা রাচিন রবীন্দ্র

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা নাহিদ রানা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা এখনও অনেকটাই নতুন, তবে তার...

সেই রাতে কিভাবে হামলার শিকার হন, জানালেন অভিনেতা আজাদ

সাভারের আশুলিয়ায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেনছোট পর্দার অভিনেতা...
Enable Notifications OK No thanks