কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার (৭ জানুয়ারি) তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, যা দলের নেতৃত্বে নতুন একজনের নির্বাচন শুরু করেছে। ১২ বছর ধরে লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ট্রুডো এই সিদ্ধান্ত নেন। তার পদত্যাগের পর, লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত করার জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে।
কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, তিনিই প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কারণে, ট্রুডোর পর যিনি লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নেবেন, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যতক্ষণ না নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
জাস্টিন ট্রুডোর পরের প্রধানমন্ত্রীর লড়াইয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়ের পলিয়েভরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে লিবারেল পার্টির নতুন নেতাকে। বর্তমানে, পিয়ের পলিয়েভর নির্বাচনের জন্য জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে আছেন। অক্টোবরে নির্বাচনের সময়সূচি হতে পারে, এবং এর আগে হাউস অব কমন্সের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিদ্যমান সরকার ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লিবারেল পার্টি জানিয়েছে, সদস্যদের ভোটে ট্রুডোর উত্তরসূরি নির্বাচিত হবে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। তবে, কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী আলোচনায় রয়েছে:
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড
কানাডার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগের পর থেকেই লিবারেল পার্টির নেতৃত্বের জন্য তার নাম আলোচনা হচ্ছে। তিনি কানাডার এক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, যিনি ২০১৩ সালে ট্রুডোর দলীয় সদস্য হয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ক্রিস্টিয়ার সঙ্গে ট্রুডোর সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু জল্পনা রয়েছে, কারণ অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ট্রুডো। তবে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড তার পদত্যাগের পর দলের নেতৃত্বের জন্য প্রার্থী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডমিনিক লেব্ল্যাঁ
ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগের পর, কানাডার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ডমিনিক লেব্ল্যাঁ। তিনি জাস্টিন ট্রুডোর দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ডমিনিক ২০০০ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ট্রুডোর সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১২ সালে লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তবে পরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
মেলানি জলি
কানাডার শীর্ষ কূটনীতিক মেলানি জলি, যিনি ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে পারেন। তিনি কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, যেমন ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং চীন-ভারত সম্পর্কের জটিলতা।
মার্ক কার্নি
ব্যাংক অব কানাডার সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি, যিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার নামও লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে। ট্রুডো ও কার্নির মধ্যে সম্পর্ক ছিল এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে সরিয়ে তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য গোপনে আলোচনা হয়েছিল।
এসব প্রার্থী সামনে আসলেও, এখনও পর্যন্ত লিবারেল পার্টির পরবর্তী নেতার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা হয়নি। তবে, তারা নির্বাচনের আগে দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন।