আপনি যদি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে থাকেন, তবে এই সময়টা কিছুটা হলেও উপভোগ করার কথা। সারা বিশ্বেই এমন কিছু ঘটছে, যা নিয়ে ভাবতে গেলে কিছুটা হলেও বেগ পেতেই হবে।
এ কথা সত্য, সৌদি আরব একটা লম্বা সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিলো। এতটাই ঘনিষ্ঠ, দেশটিতে নারীদের রেসলিং পর্যন্ত আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি যখন হাজীরা হজ্ব পালন করতে মক্কা মদীনায় আসছেন, সে সময়েও রেসলিং এর বড় কোম্পানি WWE এর একটি স্পেশাল শো রাখা হয়েছে।
কিন্তু, সবশেষ দুই চারদিনের অবস্থা যদি লক্ষ্য করা হয়, তাহলে এই কথা বলতেই হবে, সৌদি এবং মার্কিন সম্পর্ক কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে।
মাসকয়েক আগেই চীনের মধ্যস্থতায় নিজেদের মাঝে সব ধরণের তিক্ততার অবসান ঘটিয়েছে ইরান এবং সৌদি আরব। সেই ইরান, যাদের সাথে গত তিন দশক ধরে বৈরি সম্পর্ক চলছে যুক্তরাষ্ট্রের।
ইরান এবং সৌদি আরবের এই শান্তিচুক্তি অনেক বড় কিছু দ্বন্দের “রাজনৈতিক” অবসান ঘটাচ্ছে। শিয়া-সুন্নির মধ্যে চলমান বৈরিতা অবসান করতে এমন এক সন্ধির প্রয়োজন ছিলো। ধর্মীয় দিক থেকে তা পুরোপুরি অসম্ভব। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে এই সন্ধি যে অত্যন্ত কাজের তা এরইমাঝে বুঝে গিয়েছেন সবাই।
ইরান এবং সৌদি আরবের শান্তিচুক্তির পরপরই ইয়েমেনে যুদ্ধ শেষের ঘোষণা এসেছে। সৌদি আরব নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। হুতি বিদ্রোহীরাও মেনে নিয়েছেন শান্তির বার্তা। বাকি আছে কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল সম্ভবত সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন। দেশটিতে প্রায় এক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। আরব লীগ থেকেও বহিস্কার হয়েছিলো তারা। কিন্তু সেই পাশার দান উলটে গিয়েছে। সিরিয়া ফিরেছে আরব লীগে।
শুধু তাইই নয়, সেই একই বৈঠকের পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জানিয়ে দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলকে আর কারও রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হতে দিচ্ছেন না তারা।
ঠিক কাকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলা হয়েছে, তা স্পষ্ট করা না হলেও, কথাটা যে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ইঙ্গিত করা হচ্ছে তা সকলেই জানেন।
বড় কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প তাহলে কে? উত্তরটা একেবারেই সহজ। শি জিন পিংয়ের দেশ চীন। শেষ কয়েক বছর ধরেই নিজের দেশের ইমেজ বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। সেই দৌড়ে অনেকটা সফলও বলা চলে তাকে।
চীনের এমন সফলতার পেছনে বাণিজ্যিক কারণটাকেই বড় করে দেখা যায়। চীনের বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যেকোন দেশের জন্যই বেশ বড় সুযোগ। সেই দিক বিবেচনায় কিছুটা হলেও এখন বিপাকে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটিতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ কয়েক ব্যাংক যেমন বিলুপ্ত হয়েছে। তেমনি আছে বড় রকমের ঋণের চাপ।
শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্য। শুধুমাত্র ঋণের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যেই জি-৭ বৈঠকের পর কোয়াড এর সম্মেলনে যাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তাই একথা এখন বলতেই হয়, আপনি যদি রাজনীতি সচেতন হয়ে থাকেন, তবে চোখ কান খোলা রাখুন। বিশ্ব রাজনীতি এমন পরিস্থিতি দেখেনি বহুদিন।