বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের গুরুতর অসুস্থ চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন আইনমন্ত্রী কর্তৃক নাকচ করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রোববার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে খালেদা জিয়াকে হত্যার একটি গভীর মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ হিসাবে অভিহিত করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসলে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন।
আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনে আইনমন্ত্রী যে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত দোসর হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। বেগম খালেদা জিয়ার জীবন, বেঁচে থাকা এবং উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সবকিছু প্রধানমন্ত্রী আর আইনমন্ত্রীর তামাশার হিংস্র বৃত্তে আটকে রাখা হয়েছে। দেশে এখন চলছে জয়বাংলার আইন। এই আইনে সুশাসন ও ন্যায়বিচার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। অপপ্রচার, অসত্য ও বানোয়াট কাহিনী কুৎসিত প্রচারণা চালানোর পরেও দেশনেত্রীর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে তাঁর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মর্যাদায় চিড় ধরাতে না পেরে শেখ হাসিনা আক্রোশের নানামুখী প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন। আর এজন্য তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন এবং এখন তাঁর উন্নত চিকিৎসায় বাধা দিয়ে দুনিয়া থেকে সরানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে আজ আইন মন্ত্রণালয়ের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত মানবতা বিরোধী, বর্বর ইচ্ছা পূরণ ও অবিচারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই সিদ্ধান্ত, ক্ষমতা জোর করে আঁকড়ে রাখতে শেখ হাসিনা পথের কাঁটা সরানোর দিগন্তবিস্তৃত লালসা পূরণের নিষ্ঠুর প্রজেক্ট। এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি গভীর মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, সরকারের নৃশংসতা এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান শক্তি জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রীতি সমাধিস্থ করে কতৃর্ত্ববাদের নতুন আদর্শ, নতুন ভাবধারা ও নতুন নতুন রচিত নীতির মাধ্যমে দেশবাসীকে নির্বাক করে বন্দী করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জনগণ পথে পথে অবরোধ করবে। পচা, গলিত একদলীয় নব্য বাকশালের হিংস্র দুঃশাসনকে প্রবল গতিতে প্রতিরোধ করবে জনগণ।
বিচার বিভাগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নাৎসি জার্মানির ‘সিক্রেট স্টেট পুলিশ’ যার সংক্ষিপ্ত নাম ‘গেষ্টাপো’র ন্যায় বাংলাদেশে আওয়ামী ‘গেষ্টাপো’ হিসেবে পরিচিত আদালত, পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে জনগণের সামনে মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গেষ্টাপো’রা বেঞ্জামিন ইনজেকশন দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ বন্দীদের হত্যা করতো। বাংলাদেশেও এখন তা চলছে।বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করার পরে বিভিন্ন কায়দায় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
রিজভী বলেন, চারিদিকে পৈশাচিক প্রবৃত্তির যে ছবি দৃশ্যমান হচ্ছে সেটি বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলতে জনগণ আজ অঙ্গীকারাবদ্ধ। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশে বেগম খালেদা জিয়া বন্দী এবং উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রী তালুতন্ত্র তৈরি করেছেন, রাষ্ট্রশক্তিকে হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার ধারাবাহিকতার প্রথম ও প্রধান টার্গেট করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। কারণ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ জিয়া, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকারী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের প্রতি জাতক্রোধ শেখ হাসিনার।
তার ভাষ্য, এই কারণেই বেগম জিয়াকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেই চলছে বহুমাত্রিক নিষ্ঠুর আয়োজন। আজ আইন মন্ত্রণালয়ের এই বেআইনী সিদ্ধান্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দেয়ারই অংশ। আইন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। জনগণ এই সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মার্কিন ভিসা নীতি শেখ হাসিনাকে টেনশনে ফেলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে দুঃশাসন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসানীতি ঘোষিত হওয়ায় শেখ হাসিনা স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ায় বিহব্বল হয়ে পড়েছেন।
এ সময় সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলায় আহত, মামলা ও গ্রেফতারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
রিজভী জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মোট আহত ১৬৫০ জন নেতাকর্মী। মোট মামলা হয়েছে ৩৩৮টি, মোট গ্রেফতার ২১০০ জন ও আসামি হয়েছে ১৩ হাজার ৪৬০ জন নেতাকর্মী।