স্বৈরাচার আওয়ামী শাসনের ১৫ বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক ত্রাসের রাজত্ব দেখেছে। ছাত্রলীগ হলের ভেতর-বাহির র্যাগিং, টর্চার সেল, গেস্টরুম সংস্কৃতি জারি করে রেখেছিল। জুলাই বিপ্লবে সেই অপশাসনের পতন ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে আঁকা এক গ্রাফিতি সেই অপশাসনের পতনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যেখানে লেখা ছিল–’গণরুম, গেস্টরুম মুক্ত ঢাবি দিয়ে গেলাম, তোমরা রক্ষা করিও’।
গ্রাফিতিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সূর্যসেন হলের কোনো এক কক্ষের দেয়ালে এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম ব্যাচের অর্থাৎ ২০২২-২৩ সেশনের কোনো শিক্ষার্থী।
স্পষ্ট ভাষায় উত্তরসূরিদের জন্য এক বার্তা দেওয়া সেই কক্ষের তথ্য ও অঙ্কনকারীর পরিচয় জানা যায়নি। তবে ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ছবিটি ভাইরাল হয়েছে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বর্ষপূর্তির দিনে। আওয়ামী শাসনের পতনের পর গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতির বদল ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতে থাকা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে এমন গ্রাফিতিকে এক জোরালো বার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এক শিক্ষার্থী জানান, দেশের প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই অভিশপ্ত সংস্কৃতিকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, স্লোগানটি নতুন করে শিক্ষার্থীদের মনে এমন আত্মোপলব্ধি ও গভীর অনুভূতির সঞ্চার করেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম ব্যাচ হলো গণরুম ও গেস্টরুমের শেষ ব্যাচ। এরপর ১০৩ ও ১০৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন এবং গেস্টরুমমুক্ত ক্যাম্পাস পেয়েছেন।
এর মূল বার্তাটি স্পষ্ট যে, আর কোনো শিক্ষার্থী যেন গেস্টরুম ও গণরুমের মতো অমানবিক সংস্কৃতির শিকার না হয়।
স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে এখন শিক্ষার্থীরা আর চুপ থাকতে রাজি নয়। তারা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার।
একটি গ্রাফিতিটি শুধু লেখা হিসেবে নয়, এটি এক আন্দোলনের ফসল, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক। স্মরণ করিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হওয়া উচিত, ভীতিকর পরিবেশের আখড়া নয়। শীর উন্নত করে চলবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী। কোনো রাজনৈতিক নেতার কাছে নত হবে না তার শীর। একটি সীটের জন্য কারও পদলেহন করতে হবে না।