ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা গাজায় চলমান সহিংসতা আর শিশুদের মৃত্যু দেখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণ করার পর এক আবেগঘন বক্তব্যে তিনি নিজের এই অনুভব ব্যক্ত করেন।
গার্দিওলা বলেন, “গাজায় যা হচ্ছে, তা খুব যন্ত্রণাদায়ক। শরীরের প্রতিটি অংশে সেই কষ্ট অনুভব করি।” তার মতে, বিষয়টি কারো রাজনৈতিক অবস্থান বা আদর্শ নয়, বরং মানবতা এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার প্রশ্ন।
এই ফুটবল কিংবদন্তি আরও বলেন, “প্রতিদিন সকালে আমি যখন আমার সন্তানদের—মারিয়া, মারিউস আর ভ্যালেন্টিনাকে দেখি, তখন গাজার শিশুদের কথা মনে পড়ে যায়। তখন খুব ভয় পাই। কারণ আজ যেটা দূরে ঘটছে, কাল সেটা আমাদের জীবনেও ঘটতে পারে।”
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে প্রায় ২০ মাস ধরে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হয় এই যুদ্ধ। ওই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন, এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪,৮৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গার্দিওলা তার বক্তব্যে একটি গল্প তুলে ধরেন। একবার একটি বন জ্বলছিল। সব প্রাণী ভয় পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু একটি ছোট পাখি সমুদ্র থেকে ঠোঁটে করে পানি এনে আগুনে ফেলছিল। এক সাপ এসে তাকে ব্যঙ্গ করে বলল, “তুমি আগুন নেভাতে পারবে?” পাখিটি জবাব দেয়, “জানি পারব না। তবুও আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।”
এই গল্প দিয়ে গার্দিওলা বোঝাতে চান, ছোট ছোট উদ্যোগও বড় পরিবর্তনের শুরু হতে পারে। “অনেকেই ভাবে, আমরা কিছু করতে পারি না। কিন্তু আমি মনে করি, একেকটি ছোট সিদ্ধান্তই অনেক বড় পরিবর্তন আনে। তাই চুপ না থেকে কথা বলাটাই সবচেয়ে জরুরি,” বলেন গার্দিওলা।
এটাই প্রথম নয়, গার্দিওলা আগেও বিভিন্ন মানবিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে মুখ খুলেছেন। ২০১৮ সালে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে হলুদ রিবন পরায় ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করে। এক বছর আগেই তিনি বার্সেলোনায় স্বাধীনতাকামী বড় এক সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।
গার্দিওলাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়ার পেছনে ছিল শুধু মাঠের সাফল্য নয়, তার সামাজিক দায়বদ্ধতাও। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ৯ বছরে ১৮টি শিরোপা জেতার পাশাপাশি, তার পরিবার পরিচালিত ‘গার্দিওলা সালা ফাউন্ডেশন’ সমাজকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
গাজার যুদ্ধ নিয়ে শুধু গার্দিওলাই নন, আরও অনেক ক্রীড়াবিদও সরব হয়েছেন। লিভারপুলের তারকা মোহামেদ সালাহ ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন নিরীহ মানুষের রক্তপাত বন্ধে তারা পদক্ষেপ নেন।
ডাচ ফুটবলার আনোয়ার এল ঘাজি গাজার পক্ষে সোচ্চার হয়ে চাকরি হারান। তার প্রো-প্যালেস্টাইন পোস্ট নিয়ে ক্লাব মেইনৎস চুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে তিনি জানিয়ে দেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া ৫ লাখ ইউরো গাজার শিশুদের সহায়তায় দান করবেন।