গাজা যুদ্ধের সময় সাত মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত যুদ্ধ থামার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ এর বিপরীতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে বার্লিনের ওপর আরও একটি চাপ এলো।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) একটি অভ্যন্তরীণ মামলা হয়েছে।
এর ফলে ইসরায়েলের কাছে সমস্ত অস্ত্র বিক্রি বাতিলের জন্য জার্মানি নতুন করে একটি ‘আহ্বানের মুখোমুখি’ হবে।
জার্মানির অভ্যন্তরীণ আদালতে একটি মামলায় বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন সরকারকে জরুরিভিত্তিতে ইসরাইলে সব ধরণের অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দেয়।
জার্মানিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসাবে দেখা হয়।
জার্মানি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
গাজায় প্রাণের আশঙ্কায় থাকা পাঁচ ফিলিস্তিনির পক্ষ থেকে চারটি মানবাধিকার সংগঠন এই মামলা করেছে।
গ্রিন পার্টির নেতৃত্বাধীন ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিরুদ্ধে এই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জার্মানির এই বিভাগটি যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে রপ্তানি লাইসেন্স দিয়ে থাকে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ইসিসিএইচআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জার্মান সরকার অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি, জেনেভা কনভেনশন এবং গণহত্যা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।’
মামলাটি লিখিত কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই মামলাটি ইসরায়েল ৩ হাজার জার্মান অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র বিক্রয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মামলা তথ্য অনুযায়ী – এই পাঁচ ফিলিস্তিনির মধ্যে রয়েছেন যারা যুদ্ধে স্বজন হারিয়েছেন, পাশাপাশি তাদের বাড়িঘর ও চাকরি হারিয়েছেন এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হন।
এক বাদী বলেন, ‘উত্তর দিক থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল গুলি চালালে আমার পাঁচ সন্তানের সবাই নিহত হয়। জার্মানিকে অবশ্যই অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে, যা এই যুদ্ধে ইন্ধন জোগায়। আর কোনো মাকে যেন এমন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।’
ইসিসিএইচআর-এর সাধারণ সম্পাদক ভোল্ফগ্যাং কালেক বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার ‘মৌলিক’ একটি বিষয়।
জার্মান পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে, নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। জার্মানি যদি এমন একটি যুদ্ধে (ইসয়েয়েলে) অস্ত্র রপ্তানি করে যেখানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন স্পষ্ট, তবে জার্মানি তার মূল্যবোধের প্রতি সৎ থাকতে পারে না।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা করেছেন। তবে ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি বলছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংরক্ষণ তাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে জার্মানি ইসরায়েলে ২০৩ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করে। তবে গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১ মিলিয়ন ইউরো।