ও আল্লাহ, আমার স্বর্ণের চাক্কারে তুমি কই নিয়া গেলা? আমার কইলজার টুকরারে ছাড়া আমি অহন কেমনে থাকমু? মরার তিন দিনেও আমার বাপধনরে দেখবার পাইলাম না গো। তুমি আমারেও তুইল্লা নাও আল্লাহ।’ ছেলে রেজাউলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে এভাবেই আহাজারি করছেন মা রেনু বেগম (৪৫)।
গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন পথচারী হাফেজ রেজাউল (২১)। তিনি শেরপুরের নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি আবদুস সাত্তারের বড় ছেলে। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস বিভাগের ছাত্র ছিলেন রেজাউল।
গতকাল শনিবার সকালে রেজাউলের চাচা আজাহারুল ইসলামের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাঁর মৃত্যুর খবর দেয় নকলা থানা-পুলিশ। পুলিশ তাঁদের ঢাকায় গিয়ে রেজাউলের লাশ আনতে অনুরোধ করে। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রেজাউলের মা–বাবা। এ ছাড়া তিন দিনেও ছেলের লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একেবারেই নম্র-ভদ্র সদালাপী রেজাউল কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তার তিন বোন। ময়মনসিংহ জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসা থেকে পড়া শেষ করে তিনি ঢাকায় দাওরা হাদিস বিভাগে ভর্তি হন।
নিহত রেজাউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা আব্দুস সাত্তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনরা শরীরে পানি ছিটিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলতে থাকেন, ‘কি হইল, কিছুই বুঝবার পারতাছি না। কত কষ্ট কইরা লেহাপড়া (লেখাপড়া) করাইতাছি। গতকাইল মোবাইলে কথা হইল। আইজ সকালে শুনি বাপ আমার নাই। আমার বাপের কি দোষ। ও তো কোনো দল করত না। তাইলে কেন অরে মারল। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, আমার পোলারে যারা মারছে আপনে তাদের ন্যয্যবিচার করবেন।’
চরঅষ্টধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী বলেন, রেজাউল অত্যন্ত ভদ্র ও ধার্মিক ছেলে ছিলেন। তাঁর বাবা অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। রেজাউল রাজনীতি করতেন না। রেজাউলের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টের।
প্রতিবেশী ও আত্মীয় বন্দেজ আলী বলেন, সবসময় হাসিখুশি রেজাউল কোনো সাতে-পাঁচে ছিলেন না। তার ছোট ভাইও একজন হাফেজ। রাজনীতি করতেন না। রোজার মাসে স্থানীয় মসজিদে খতম তারাবি পড়ান। কোরবানি ঈদে বাড়ি আসেন। কয়েকদিন পর ঢাকায় চলে যান। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবারের ঘটনায় পশ্চিম নারায়ণখোলা গ্রামের রেজাউল মারা গেছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। সেই লাশ গ্রহণের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের খবর দিন। আমরা সকালে মৃত্যুর খবর জানিয়ে লাশ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করি। স্বজনরা তার লাশ আনার জন্য ঢাকায় গেছেন।’