সম্প্রতি গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে একটি অজ্ঞাতনামা লাশ দাফনের খবর। এরপর পরিবার জানা যায় লাশটি একজন স্থপতির। যার নাম মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফের লাশ উঠিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত আলিফের সঙ্গে পরিচয় স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়ার! অ্যাপে যোগাযোগের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। গত ৭ মার্চ ইমতিয়াজ ফোন করলে আলিফ তাকে কলাবাগান ক্রিসেন্ট রোডে আরাফাতের বাসায় যেতে বলেন। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হয়। আলিফ ও আরাফাত ব্ল্যাকমেইলিং করে ইমতিয়াজের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল।
ইমতিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
সোমবার (২৭ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডিবি প্রধান। তিনি জানান, ইমতিয়াজ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন–মিল্লাদ হোসেন মুন্না (১৯), আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও এহসান ওরফে মেঘ (হিজড়া) (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৭ মার্চ রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ক্রিসেন্ট রোড এলাকা থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়া নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় পরের দিন ৮ মার্চ কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ভুক্তভোগীর পরিবার। ওই দিনই মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার চিত্রকোট ইউনিয়নের কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশের ঝোপ থেকে ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরাফাত ফয়সাল আহমেদ রাহাত ওরফে হৃদয়, মিল্লাত হোসেন মুন্না, আলিফ, এহসান ওরফে মেঘ ও আনোয়ার হোসেনকে শনাক্ত করে অভিযান শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। এদের মধ্যে ২৬ মার্চ সিরাজগঞ্জ থেকে মিল্লাত হোসেন মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলাবাগান এলাকায় থেকে আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেফতার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, আসামিরা সমকামী এবং হিজড়া। তারা একটি গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে পূর্ব থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে। তাদের বিভিন্ন বাসায় ডেকে নিয়ে নানা কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে আসছে।
গ্রেফতার আসামিদের বরাতে পুলিশ আরও জানিয়েছে, ইমতিয়াজ ওই দিন কলাবাগানের ওই বাসায় যান। পরে আলিফের সঙ্গে একান্তে একটি রুমে ছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে প্রবেশ করে ভিকটিমকে মারধর শুরু করে। এরপর তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা ইমতিয়াজের বুকে, পিঠে আঘাতসহ প্রচণ্ড মারধর করে। এতে তার মৃত্যু হয়।
ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে সুকৌশলে বাসা থেকে তার মৃতদেহ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোডে নামিয়ে দেয়। এরপর আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ, পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়।
হারুন অর রশীদ জানান, ভারতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় তাদের অবস্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে তারা পালিয়ে আবার একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এরপর ডিবি পুলিশের অভিযানে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার হয়।