ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বয়ান করায় মসজিদের ইমামকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে তারাবিহ নামাজ শেষে মোনাজাতে এ নিয়ে দোয়া করেন ওই ইমাম। পরদিনই তাকে নামাজ পড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিনের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ এমন আচরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার বলছেন, ইমাম সাহেব প্রায়ই মসজিদে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন। এ কারণে তাকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারের নির্দেশে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টোর কিপার আবদুল বাতেন ইমামকে বরখাস্ত করেন। এখন মুয়াজ্জিনই নামাজ পড়াচ্ছেন। আবদুল বাতেন বলেন, ইমামকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদার মো. শামীম মিয়া বলেন, ঠিকাদার জসিম, সোহেলসহ আমরা তারাবিহর নামাজ পড়তে গেলে হুজুরের সঙ্গে কথা হয়। তখন ফাইল যেন তাড়াতাড়ি ছুটে যায় এ ব্যাপারে হুজুরের কাছে দোয়া চাই। হুজুর মোনাজাতে এ নিয়ে দোয়া করলেন। আর এই জন্য এখন হুজুরের চাকরি নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন আহমেদ সেলু বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারেরা স্থানীয় হওয়ায় তারা এ মসজিদেই নামাজ আদায় করেন। তারা বিল পাচ্ছেন না অনেক দিন ধরে। সে কারণে ইমাম সাহেবের কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ বিষয়ে দোয়া করার কারণে ইমাম সাহেবকে চাকরিচ্যুত করা অন্যায়।
পল্লী বিদ্যুৎ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, গত শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় ঘুষ এবং দুর্নীতি নিয়ে বয়ান দেন তিনি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ঘুষ এবং দুর্নীতির বিষয়ে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরেন। ঘুষ-দুর্নীতি ছেড়ে তওবা করার কথাও বলেন। এ কারণে পরে পল্লী বিদ্যুতের জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার তাকে সতর্ক করেন।
ইমাম বলেন, সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যেন ফাইলপত্র দ্রুত ছাড়া পায় সে জন্য রোববার তারাবিহর সময় আমার কাছে কয়েকজন ঠিকাদার দোয়া চেয়েছেন। এ বিষয়ে দোয়া করায় আমাকে মসজিদে নামাজ পড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
তবে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার বলেন, ইমাম সাহেব প্রায়ই মসজিদে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন। এ কারণে তাকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি।
জুলফিকার আরও বলেন, ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে অনেকেই আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে কারা আছেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কারও নাম বলতে পারেননি। পরে বলেন, মসজিদের সহ-সভাপতি (এজিএম, অ্যাডমিন) অলিউর রহমান সম্ভবত আছেন। আর কারা আছেন এই মুহূর্তে মনে নেই।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই শুনলাম। আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম সাহেবের সঙ্গে কথা বলব। ঘটনাটি আমি যাচাই করব। ইমাম সাহেবকে যদি অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ইমাম সাহেবকে পুনর্বহাল করা হবে।