বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রবল শক্তিসঞ্চয় করে সোমবার গভীর রাতেই আঘাত হানার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাতক্ষীরা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকির মাত্রা বেশি৷
প্রচণ্ড উত্তাল সাগর। দেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এরইমধ্যে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর৷
তবে উপকূলীয় এলাকার অনেকেরই অজানা এসব বিপৎসংকেতের অর্থ।
৭ নম্বরের বিপৎসংকেতের অর্থ হচ্ছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝামেলাপূর্ণ এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদফতরের সমুদ্রের ক্ষেত্রে ১১ এবং নদীবন্দরের ক্ষেত্রে চারটি সংকেত নির্ধারিত করেছে। এই সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে।
সমুদ্রবন্দরের সংকেত
১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত:
এই সংকেতের মাধ্যমে বোঝানো হয় জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিমি, যা সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত:
দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সে এলাকায় বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। বন্দর ঠিক এ মুহূর্তে ঝড়ে কবলিত হবে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদের মুখোমুখি হতে পারে।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত:
বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত:
এ সংকেত নির্দেশ করে বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপদজনক অবস্থা এখনো আসেনি।
৫ নম্বর বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝামেলাপূর্ণ এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নম্বর বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝামেলাপূর্ণ এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝামেলাপূর্ণ এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত:
আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
নদীবন্দরের সংকেত
১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত:
বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার উপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।
২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত:
বন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমতূল্য তীব্রতার একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিমি বা তদুর্ধ্ব। নৌযান এদের যে কোনটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ বিশিষ্ট নৌযানকে দ্র্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত:
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সকল নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলঅকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। সকল প্রকার নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম উপকূলে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।