চট্টগ্রামে টাকা চুরির অভিযোগ নিয়ে দুই শিশুকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় একজনের মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায় এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। রবিবার দুপুরে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর ঘটনায় জড়িত পুলিশের তিন সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত তিন পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. মেহেদী, মো. মাজহার ও মো. এহসান। তাঁরা নগর পুলিশের মনসুরাবাদ লাইনে থাকেন।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সেখানে থেকে নগরের বাটালি হিল, লালখান ম্যাজিস্ট্রেট কলোনিসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার জন্য টহল পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
ঘটনার শিকার দুই শিশু লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে। তাদের একজন স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা একটি কারখানায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। আরেক শিশু কিছু করে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনা নিয়ে জানিয়েছে,
শুক্রবার তাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে কে বা কারা পাথর ছুড়ে মারে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি, মতিঝর্ণাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায়ই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন তিন শিশু লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ব্রিজের নিচে বসে গল্প করছিলো। তখন টহল পুলিশ সদস্যদের কাছে খবর যায়, এই শিশুরা সেখানে প্রায়ই চুরি করে থাকে।
পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের ধাওয়া দিলে একজন পালিয়ে যায়। অন্য দুজনকে ধরে পাশের জিলাপির পাহাড়ে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। পরে একটি লোহার খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সেখানে একজনের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। পরে এসে জানতে পারি। দুই কিশোরকে টহল পুলিশের সদস্যরা ধরলেও স্থানীয় থানা–পুলিশকে কিছুই জানাননি। তাঁদের উচিত ছিল থানা–পুলিশকে জানানো।
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. মেহেদী বলেন, তিনটা ছেলের বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ দিলে আমরা সেখানে যাই। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের মারধর করতে থাকে। পুলিশ তাদের রক্ষা করে। তাদের কাছে কোনো মাদক কিংবা চুরির মালামাল পাওয়া যায়নি। তাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। বয়স কম হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) শাহাদাত হুসেন বলেন, শিশুদের নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন পুলিশ কনস্টেবলকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে আজ দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।