চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চবির দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে ক্যাম্পাস প্রশাসন।
শনিবার(২৩ জুলাই) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
এ ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া দুই ছাত্র হলেন—ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আজিম হোসাইন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল আবসার বাবু। বাকি দুজনের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর শাস্তির আবেদন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তথ্য উপাত্ত, র্যাবের প্রেস ব্রিফিং, তদন্ত কমিটির ইন্টারনাল প্রতিবেদন, সিনেটদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দুই ছাত্রকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর শাস্তির জন্য চিঠি পাঠানো হবে। এ ছাড়া কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে বিবস্ত্র করে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু। রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করেছেন। তবে রুবেলকে এরইমধ্যে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এর আগে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের খবর জানিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এতে জানানো হয়, চবিতে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মোট ছয়জনের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে।
ঘটনা নিয়ে আসামিদের বরাতে র্যাব যা বলছে:
সেদিন রাত ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে ওই ছাত্রী তার এক বন্ধুসহ হলের দিকে ফিরছিলেন। আজিম ও তার গ্রুপটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিতে থাকে। ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ তাদের নজরে আসে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিক থেকে হেঁটে আসছে, জায়গাটি একটু নির্জন। শুরুতে তারা গিয়ে ভুক্তভোগীদের চার্জ করে। ছাত্রীর সঙ্গে থাকা ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। অভিযুক্তরা তাদের কাছে গিয়ে এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করে। ছেলেটির কাছে দাবি করা হয় চাঁদা। একপর্যায়ে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়।
এরপরই তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে ছয়জন তাদের ওপর চড়াও হয়। ছেলেটিকে আটকে রেখে মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে। প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে, তারপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও টাকা পয়সা নিয়ে নেওয়ার পর তারা (জড়িতরা) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তখন ভুক্তভোগীরা একটি হলে গিয়ে এক ছাত্রের মোবাইল থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ জানায়।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জানান, এরা বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসির সদস্য। এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না। বিশ্ববিদ্যালয় আইনি ব্যবস্থা নেবে। ঘটনার পরপরই আমরা চেষ্টা করেছি অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে র্যাবের হাতে ধরিয়ে দিতে। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় তো সংগঠন নেবে না। এখন আসলে কিছু হলেই সবাই ছাত্রলীগকে অভিযুক্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।