বর্তমান চলমান নির্বাচনী ট্রেনের গন্তব্য কোথায়?
বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বা ধারাবাহিকতায় অভিনব একটি ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচন জাতির দরজায় কড়া নাড়ছে।
প্রসঙ্গ অনুযায়ী উল্লেখ যে এমন প্রক্রিয়া শুরু হবার কমপক্ষে তিনদিন পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্ভবত সর্বশেষ সংলাপ,সমঝোতা এবং অবাধ সুষ্ঠুনিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমলূক একটি নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বিএনপি আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নিকট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস্টার লু একটি পত্র প্রেরণ করেন।
যে পত্রটি চূড়ান্ত এবং সর্বশেষ বার্তা হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস্টার পিটার হাস বিএনপি আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির কাছে পৌঁছে দেন। তবে উল্লেখযোগ্য যে, বিএনপি জাতীয় পার্টির যথাসময়ে পত্রটি গ্রহণ করলে ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ পত্রটি গ্রহণ করতে অত্যন্ত সুকৌশলে সময়ক্ষেপণ করেছেন। এমনকি দেখা যায় তপশিল
ঘোষণার দিন শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক মিস্টার ওবায়দুল কাদের পত্রটি গ্রহণ করেন। যা অনেকটা চিঠিটিকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেছেন। বলতে গেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেদিন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য উৎসাহ প্রদানের ক্ষেত্রে থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন।
ক্ষমতাসীনদের মনোভাব নিশ্চিত হয়েই তারপর দিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস্টার হাস প্রায় দুই সপ্তাহের অবকাশকালীন ছুটিতে চলে যান। পক্ষান্তরে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অথবা অনেকটা ভেবেচিন্তে সুকৌশলে বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসক বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে ভূরাজনীতির মাঠে নিয়ে আসেন অর্থাৎ একদিকে চীন ভারত রাশিয়াকে পাশে রেখে
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভু-রাজনীতিতে একটি বিভাজন রেখা টেনে দেন। যার ফলশ্রুতিতে একটি অংশের নেতৃত্বকারী দেশ হিসেবে রাশিয়া একাধিকবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের
অভিযোগ তুলেবি বিবৃতি প্রদান করেছে।
মস্কোর এই ধরনের মনোভাবের প্রতি ভারত এবং চীনের ‘ইন্ধন’ রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এখানে বলাই বাহুল্য; ঐতিহাসিকভাবে চীন এবং ভারত দুই মেরু ও মেরুকরণে একে অপরের প্রতিপক্ষ হলেও “এক অদৃশ্য অজানা” কারণে বাংলাদেশ প্রশ্নে এই দুই পরাশক্তি একটি সমান্তরাল রেখায় অবস্থান করায়
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদেরকেও বিস্মিত করেছে । যাহা একটি গবেষণার ও দাবি রাখে।
২। গেল কয়েক মাসে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে অদ্যবদি বিভিন্ন সভা সমাবেশে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মিত্রদের অনেক বাঘা বাঘা নেতারা একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “অপ্রমানিত” বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সামরিক ঘাঁটি তৈরি
করতে চাওয়া, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার অপতৎপরতা লিপ্ত, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিনীদের অসহযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পক্তৃতা ইত্যাদি ।
এসবগুলোই রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে উত্থাপিত হওয়ায় নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এইসব অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশ্লেষকরা মনে
করেন; বাংলাদেশীদের আকাঙ্ক্ষার সাথে যুক্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকারকে যে উৎসাহ প্রদান করে আসছিল সেই বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে ধাবিত করার জন্য বর্তমান শাসক শ্রেণী এইসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বলা যায়; আওয়ামী লীগ সরকার এখনো প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের মনোজগতে বুনে দিতে যে ,”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই উৎসাহ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং যার নেপথ্যে রয়েছে মার্কিনীদের গভীর ষড়যন্ত্র।” সরকার এই অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত করতে তার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোকে ও ব্যবহার করে চলেছে । অনবরত। কিন্তু এতসবের পরেও বাংলাদেশের বর্তমান শাসক শ্রেণী দেশের জনগণ এবং পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে
পেরেছেন বলে মনে হয় না।
৩। কিন্তু অন্যদিকে রাশিয়া ভারত চীনের তৎপরতা, বক্তৃতা বিবৃতিতে, অবস্থান এমনকি চীন ভারতের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি বর্গের দৃশ্যমান অদৃশ্যমান আসা-যাওয়া; আনাগোনা কে বর্তমান শাসক শ্রেণী বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষে প হিসেবে মোটে ই ভাবতে চান না; বরং এসব কর্মকান্ডকে বা আসা-যাওয়াকে সরকার আশ্রয় প্রশ্রয় দিতে এক ধরনের স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন।
আর এই বিষয়গুলো স্বাধীন বাংলাদেশিরা বরাবরের মতোই বাঁকা চোখে দেখছে। অন্যদিকে এইসব চলমান ঘটনা প্রবাহ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিএদের উদ্বিগ্নতাকে গভীর থেকে গভীরতর করছে।
ফলে অনির্দিষ্ট অলিক গন্তব্যের এই পথে আপাতত আওয়ামী লীগ সরকার কিছুটা ‘স্বস্তিবোধ’ করলেও মূলত নিজের অজান্তেই এই শাসক গোষ্ঠী ক্রমেই ভুরাজনীতির চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে । দিনশেষে এর খেসারত জাতিকেই দিতে হবে।
লেখক : জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা