বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে সরকারি চাকরির প্রার্থী, পদের তুলনায় অনেক বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। পদের তুলনায় সরকারি চাকরির প্রার্থী আনুপাতিক হারে অনেক বেশি বলেই কি প্রার্থীদের সর্বোচ্চ হয়রানির শিকার হতেই হবে? এই হয়রানি কি কখনো শেষ হবে না? স্বাধীনতার ৫৩ বছরে ৩য় শ্রেণির একজন চাকরির প্রার্থীকেও বিভাগীয় শহর থেকে ঢাকায় কেন নিয়ে আসতেই হবে? তাহলে বিভাগীয় শহরগুলো সৃষ্টি কি শুধুই কিছু বড় বড় পদ-পদবি এবং ভবন নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ‘বুকিং সহকারী’ এবং ‘টি. সি’ এই দুটি পদে সকাল ১০টায় ও দুপুর ২টায় নিয়োগ পরীক্ষা চলছে। অনেক চাকরি প্রার্থীই আছেন যিনি একইসাথে দুটি পদেই আবেদন করেছেন। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার মতো শহরে দুইটা ভিন্ন ভিন্ন কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যে কত কঠিন এবং তার ওপর জুলুম সেটা সেই চাকরি প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন না।
এই নিয়োগ দুটিতে তিন শতাধিক পদের বিপরীতে চাকরির প্রার্থী কয়েক লাখ। দেশের ৬৪ জেলা শহর থেকে এই লক্ষাধিক প্রার্থীদের ঢাকায় নিয়ে এসে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার কর্তৃপক্ষ একবারের জন্যও যদি চিন্তা করতেন যে, লক্ষাধিক প্রার্থী সারা দেশ থেকে একই সময়ে রাজধানী ঢাকায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অনেককেই বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে।
তাহলে কর্তৃপক্ষ এত চাকরি প্রার্থীকে রাজধানী ঢাকায় পরীক্ষা না নিয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেন। এতে করে কয়েক লাখ চাকরি প্রার্থীর সময়, শ্রম, অর্থ সাশ্রয় হতো। পক্ষান্তরে লক্ষাধিক প্রার্থী হয়রানি থেকে বেঁচে যেত।
অনেকেই হয়তো ভিন্নমত পোষণ করবেন যে, নিয়োগ পরীক্ষায় অধিক স্বচ্ছতার স্বার্থে রাজধানী ঢাকায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো ভ্রান্ত ধারণা। কেননা কর্তৃপক্ষ যদি নিয়োগ পরীক্ষার স্বচ্ছতা বজায় রাখার চিন্তা করেন তাহলে রাজধানী ঢাকায় এবং বিভাগীয় শহর রাজশাহী অথবা চট্টগ্রাম কোনো পার্থক্য নেই। আমরা অনেকেই জানি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনেক জমি বেদখল হয়ে যায়। এসব বেদখলের জন্য কর্তৃপক্ষ কতখানি দায়ী তা একটা বিষয় শেয়ার করা যেতে পারে।
সেনাবাহিনীর অধীনে সারা দেশে একাধিক ক্যান্টনমেন্টের বিশাল জায়গা থেকে ১ শতাংশ জায়গাও বেদখল হওয়ার নজির নেই। কেননা সেনাবাহিনীর সদিচ্ছা আছে যে, যত প্রভাবশালীই আসুক ক্যান্টনমেন্টের জায়গা দখল করলে শাস্তি পেতে হবে। সেখানে আইনের প্রয়োগ আছে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ যদি চায় যে, রেলের নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় শহরগুলোতে অথবা রেল বিভাগের শহরগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করে স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। এতে করে রেল কর্তৃপক্ষ লক্ষাধিক চাকরি প্রার্থীর হয়রানি দূর করে সময়, শ্রম, অর্থ সাশ্রয় করতে পারে।