কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের হতদরিদ্র ইব্রাহিম খলিল মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইব্রাহিমের সীমিত আয় দিয়ে চলতো সংসার। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাতে শুরু করেন পারভীন আক্তার। বিশেষ করে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে প্রতিদিনই হিমমিশ খেতে হয়েছে তাকে।
মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে না পারা চরম আর অভাব-অনটন থেকে চির বিদায় নিয়েছেন পারভীন আক্তার (৫০)। তবে তিনি একাই পরপারে যাননি। সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন ১৩ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে মীম আক্তারকেও।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোরে পরমতলা গ্রামের বাড়ির নিজ ঘরে প্রথমে পারভীন নিজে বিষপান করেন। পরবর্তীতে জোর করে মেয়েকেও বিষপান করিয়েছেন তিনি। বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রথমে মারা যান পারভীন। আর এদিন বেলা ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর একটি হাসপাতালে মারা যান মীমও।
শনিবার বিকেলে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পারভীনের প্রতিবেশী খাদিজা আক্তার নামে এক নারী বলেন, তাদের আয়ের তেমন কোন উৎস ছিলো না। চরম অভাব অনটন আর সহ্য করতে না পেরে শনিবার ভোরে মেয়েকে নিয়ে বিষপান করেন তারা আত্মহত্যা করেছেন।
জোৎস্না আক্তার নামে আরেক নারী বলেন, ঘটনার সময় চিৎকার শুনে সেখানে গিয়ে জেনেছি- পারভীন নিজে আগে বিষপান করে পরে মেয়ে মীমকে জোর করে বিষ খাওয়েছেন। মূলত মেয়ে মীমের চিৎকারেই আশ-পাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে বাড়ির ও পরিবারের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুরে নিয়ে যাওয়ার সময় রায়পুর নামক স্থানে পারভীন মারা যান। বেলা ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মীমও মারা যায়।
ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে-মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে না পেরে এবং অভাব-অনটনের কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কি-না, সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিহতের পারভীনের আরো দুই ছেলে রয়েছে, তাদের একজনও কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ মনে হয়েছে।