মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে নিজের আস্থাভাজন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে এই তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।
এর আগে, ২০২২ সালে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব থেকে বহিষ্কার করে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করা করেছিলেন জিএম কাদের। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান একক ক্ষমতাবলে তা করতে পারেন।
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদ মৃত্যুবরণ করলে শূন্য আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পুনরায় এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন।
বারবার ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়া জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২৮ জুন দলের জাতীয় সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছিলেন জিএম কাদের। এর মধ্যেই জাপায় নতুন নেতৃত্ব গড়ার উদ্যোগ নেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগ সদস্য। বিশেষ করে কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদপ্রত্যাশী বলে জানালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে জিএম কাদেরের কপালে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যেনু জটিলতার কথা বলে ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেন জিএম কাদের।
এদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলয় ২৮ জুন কাউন্সিলর করার ব্যাপারে অনড় থাকলেও শেষ মুহূর্তে তারা পিছু হটে। তারা চেয়ারম্যানকে দ্রুত সময়ে কাউন্সিল করার আলটিমেটাম দেন। না হলে তারা পাল্টা কাউন্সিল ডেকে নতুন কমিটি করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
স্বৈরাচার খেতাব পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতেগড়া দল জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বারবার ভাঙনের মুখে পড়ে। এর মধ্যে নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে। দ্বিতীয় দফার ভাঙন হয় ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে। কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মতো ভাঙন ধরে।
২০১৯ সালে এরশাদ মারা যাওয়ার পর সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়। এবারও জিএম কাদের সম্মেলন ডাকতে গড়িমসি করলে সপ্তমবারের মতো দল ভাঙনের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।