ফেনীতেও গাজীপুরের মতো ৫ সাংবাদিকের ওপর আচমকা হামলার পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে করা তাদের পরিকল্পনা গোয়েন্দা তৎপরতায় ফাঁস হয়েছে। এ ব্যাপারে শনিবার সন্ধ্যায় বাসস ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি ছাত্রলীগ-যুবলীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর ৫ সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময়ের প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজন রয়েছেন।
সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়, ৮ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিতে পারি যে, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কতিপয় ব্যক্তি কয়েকজন সাংবাদিককের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে। ওই গ্রুপে জনৈক সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, “আমাদের উচিত গাজীপুর এর মত মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেয়া। এই চান্সে আমাদের ফেনীর সময় এর শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন এদের যে কারোর বিরুদ্ধে চান্সটা নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবে না, সব বিএনপির উপর যাবে।”
সাহেদ অভি নামে অপর একজন লিখেছেন, “এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। এই আরিফ আজম আমাদের ফেনী কলেজ সামনে নোবেলদের মিছিল ছবি প্রকাশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে….। তার ও সম্পাদক শাহাদাত এর ১০ বছর পরে হলেও ছাড় নেই। মাটির যত নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসবো, তার সাথে এনটিভি এর রাজন, যমুনা টিভির আরিফ এদের সবকয়টিকে দেখবো…।”
নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি তার সাথে সাইফ উদ্দিন মানিক, ফেনী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ, আবুল হাসনাত তুষার, সাধারণ সম্পাদক, পৌর ছাত্রলীগ, সরোয়ার রনি, সহ-সভাপতি ফেনী পৌর ছাত্রলীগ, তোফায়েল আহাম্মদ অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, নূর করিম জাবেদ, সাধারণ সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, রায়হান হাবিব শাকিল, সহ-সভাপতি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, শওকত কিরন, মো: হাসান, কাজী নিজাম উদ্দিন শুভ, সভাপতি, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ, তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সভাপতি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ সহ আরো ২০/২৫ জন এই গ্রুপে আলোচনা করেছে। এরা সবাই “গাজীপুর স্টাইলে আচমকা কোথাও কোপাই কাপাই দিতে চায় এমন আলোচনা চলছে গ্রুপে অথবা উল্লেখিত সাংবাদিকদের বাড়ী ঘরে রাতের আঁধারে অগ্নিকান্ড ঘটানোর প্ল্যানিং চলছে।”
এই গ্রুপে এডমিনগন হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক। এই গ্রুপে অন্যান্যদের মধ্যে শওকত কিরণ, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহাম্মেদ, মো: রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো: রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খাঁন শাকিল, রাকিব আহাম্মদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো: রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছেন। উল্লেখিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের প্রায় সবাই ফেনীতে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামী।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফেনীর গণহত্যায় জড়িতরা পলাতক অবস্থায় থেকে নানারকম নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের উপর হামলার এ ভয়াবহ পরিকল্পনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
সাংবাদিক ইউনিয়ন ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যম কে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সেক্ষেত্রে সাংবাদিক যা দেখবে তা লিখনির মাধ্যমে জাতিকে জানাবে। যদি তাদের কে টার্গেট করে হুমকি-ধামকি প্রধান করা হয় তা গণমাধ্যম ও এ পেশার লোকজনের পেশাধারীত্বের উপর হুমকি বলে মনে করি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত অপরাধী যে হোক তার বর্ণ পরিচয় না জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা। না হলে গণমাধ্যম হুমকির মুখে পতিত হবে যা কারো জন্য সুফল বয়ে আনবে না।